যুদ্ধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে পশ্চিম আফ্রিকান দেশ নাইজার। সেখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাত শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের হাতে শাসনভার ফিরিয়ে না দিলে নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্রতিবেশীরা। কিন্তু জান্তা সরকার তাদের এই হুমকি উপেক্ষা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করায় সংঘাতের আশঙ্কা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। নিজেদের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য তারা এরই মধ্যে রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সাহায্যও চেয়েছে।
নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজউমকে মুক্তি দিয়ে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জান্তা সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকান সামরিক জোট ইকোওয়াস। রোববার (৬ আগস্ট) শেষ হয়েছে সেই সময়সীমা। এর পরপরই যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নাইজারের আকাশসীমা বন্ধ করে দেন অভ্যুত্থানকারী সামরিক নেতারা।
রোববার রাতে আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তার আগেই জান্তার হাজার হাজার সমর্থক দেশটির রাজধানী নিয়ামির একটি স্টেডিয়ামে এসে জড়ো হন।
নাইজারে ক্ষমতা দখলকারী নেতারা নিজেদের ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দ্য সেফগার্ড অফ দ্য হোমল্যান্ড (সিএনএসপি) বলে পরিচয় দিচ্ছেন। সিএনএসপির মুখপাত্র আমাদৌ আবদ্রামানে বলেছেন, ইকোওয়াসের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই নাইজারের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় টেলিভিশনে পাঠ করা এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন, নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে দুটি মধ্য আফ্রিকান দেশে সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
আবদ্রামানে বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রস্তুতির মাধ্যমে নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি স্পষ্ট। এ কারণে রোববার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের আকাশসীমায় সব ধরনের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জান্তা মুখপাত্র বলেন, নাইজারের সব প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করতে প্রস্তুত।
নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি ক্ষমতায় টিকে থাকতে রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপেরও সাহায্য চেয়েছে নাইজারের জান্তা। সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা জেনারেল সলিফু মোডি সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ মালিতে গিয়ে ওয়াগনারের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই অনুরোধ জানিয়েছেন। সাংবাদিক এবং সোফান সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ওয়াসিম নাসর বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপ প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে। নাসরের মতে, তাদের (জান্তা) ওয়াগনারকে দরকার। কারণ ওরাই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গ্যারান্টি হয়ে উঠবে।
গত বৃহস্পতিবার জান্তা প্রধান জেনারেল আবদুরাহমান চিয়ানির সঙ্গে দেখা করার জন্য একটি মধ্যস্থতাকারী দলকে নাইজারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়নি জান্তা সরকার। এরপরেই শুক্রবার ইকোওয়াস সদস্যদের প্রতিরক্ষা প্রধানরা নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন এবং ডেডলাইন ঘোষণা করেন।
নাইজারকে ওই অঞ্চলে পশ্চিমাদের শেষ নির্ভরযোগ্য সন্ত্রাসবাদবিরোধী অংশীদার হিসেবে দেখা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান অনেকটা সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। নাইজারের সামরিক নেতারা পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে সাবেক উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সকে প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন।
নাইজারে গত ২৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ছিল পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা অঞ্চলে বিগত তিন বছরের মধ্যে সপ্তম সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা।