ঘুরতে এসে স্থানীয়দের হামলার শিকার হলেন সাংবাদিক ও তার স্ত্রী। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈইয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে আসা পর্যটক ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ১২ নম্বর খৈইয়াছড়া ঝরনার মুখে কাঠাল বাগান এলাকায় আবদুস সালাম তালুকদার হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলায় ইত্তেফাকের সাংবাদিক শিমুল জাবালি (৩২), তার স্ত্রী লুফাইয়্যা শাম্মী (২৭), শ্যালিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াক্বিয়াহ শাম্মী (২১) ও নাবিহা শাম্মী (১৫) আহত হয়।
হামলার সঙ্গে জড়িত মো. ফয়সাল (২৫) নামে একজনকে মিরসরাই থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তিনি ১২ নম্বর খৈইয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব খৈইয়াছড়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।
এ ঘটনায় সাংবাদিক শিমুল জাবালি বাদী হয়ে মিরসরাই থানায় মো. ফয়সাল ও সুমনের নাম উল্লেখ করে বুধবার দিবাগত রাতে অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা (নং-২৩) দায়ের করেছেন। সুমন পূর্ব খৈইয়াছড়া এলাকার তাজুফকির গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে।
জানা গেছে, বুধবার দুপুরে খৈইয়াছড়া ঝরনা দেখতে ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসেন দৈনিক ইত্তেফাকের ঢাকায় অনলাইন বিভাগে কর্মরত সাংবাদিক শিমুল জাবালি। এ সময় তার স্ত্রী লুফাইয়্যা শাম্মী, শ্যালিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াক্বিয়াহ শাম্মী (২১), নাবিহা শাম্মী (১৫) সঙ্গে ছিল।
সাংবাদিক শিমুল জাবালি বলেন, ‘দুপুরে ঝরণায় যাওয়ার সময় কাঠাল বাগানের সামনে আবদুস সালাম তালুকদার হোটেল এলাকায় ফয়সাল থেকে আমরা ৩টি বাঁশ ভাড়া নিই ৩০ টাকা দিয়ে। যাওয়ার সময় বাঁশ ফেরত দিলে ১৫ টাকা ফেরত দিবে বলেন ফয়সাল। পরবর্তীতে আমরা বিকাল ৫টায় ঝরনা দেখে ফেরার সময় বাঁশ ৩টি ফেরত দিয়ে ১৫ টাকা ফেরত চাই। এ সময় সে বলে ‘আমি দোকান বন্ধ করে ফেলেছি, টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না’। এ সময় আমরা বাঁশ নিয়ে চলে যেতে চাইলে ফয়সাল, সুমনসহ ৫-৬ জন আমাদের ওপর হামলা চালায়। বাঁধা দিলে আমার স্ত্রী ও শ্যালিকাদের ওপর তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে হামলা করে এবং শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। আমার স্ত্রীর গায়ে একাধিক চড়থাপ্পড় ও গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করে। আমাকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। পরবর্তীতে পুলিশকে ফোন করলে ঘটনাস্থল থেকে ফয়সাল নামে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।’
লুফাইয়্যা শাম্মী জানান, ‘খৈইয়াছড়া ঝরণার সৌন্দর্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে অভিভূত হয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। কিন্তু ঝরণার মুখে বাঁশ বিক্রির নামে কিছু বখাটের কর্মকান্ড দেখে আমরা হতবাক হয়ে যাই। তারা আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। মেরে লাশ পাহাড়ের খাদে ফেলে দেবে কেউ টেরও পাবে না বলে হুমকি দেয়। সুমন, ফয়সালসহ ৫-৬ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসি আমার স্বামী, আমার বোনদের ওপর হামলা করে এবং শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। আমার গলায় অপারেশন হয়েছিলো। তারা আমার গলা চেপে ধরে মুখে চড়থাপ্পড় দেয়। আমি পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে হামলায় জড়িত সব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
মিরসরাই থানার ওসি মো. কবির হোসেন বলেন, ‘খৈইয়াছড়া ঝরণা এলাকায় পর্যটকদের ওপর হামলা ও শ্লীলতাহানীর ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ফয়সাল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
উল্লেখ সাংবাদিক শিমুল জাবালীর জন্মস্থান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। এমন হামলায় ফরিদগঞ্জবাসী হতবাক এবং ক্ষুব্ধ। তারা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছেন। শিমুল জাবালী সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চাও করছেন। তিনি শূণ্য পরবর্তী দশকের একজন আলোচিত কবি। ইত্তেফাকে কাজ করার আগে তিনি দৈনিক খোলা কাগজের সাহিত্য সাময়িকী ‘জীবনানন্দ’ এর সম্পাদনা করতেন। শিমুল জাবালী ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র নিরাপদ করতে হবে। প্রায় সময়ই পর্যটক হামলার খবর শুনি। এটা অত্যান্ত নিন্দনীয় কাজ। আমি সাংবাদিক শিমুল জাবালী এবং তার স্ত্রীর উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।’