ফরিদগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা, বিদ্যুৎ হীনতা, জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনা অপসারণ, সৌচাগার নির্মাণ ও ব্যবহার অনুপযোগী, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে অব্যবস্থপনার প্রতিবাদে ‘ফরিদগঞ্জ পৌরবাসী’র ব্যানারে পৌর এলাকার নাগরিকগণ ওই কর্মসূচী পালন করেছে। বুধবার বিকালে ওই কর্মসূচী পালিত হয়েছে স্থানীয় কেরোয়া বাজারে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব এর সহ-সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ফরিদগঞ্জ সংবাদদাতা সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নাগরিক হিসেবে অধিকার আদায়ের জন্য আজকের এই সমাবেশ ও মানববন্ধন আয়োজন করা হয়েছে। সমস্যাগুলো তুলে ধরছি ও বাস্তবায়নের লক্ষে মেয়রের কাছে দাবী জানাচ্ছি। পৌর এলাকায় অতিরিক্ত ধার্য্য করা ট্যাক্স দিতে জনসাধারণ অক্ষম। অথচ, ট্যাক্স আদায়ে তারা সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের পৌরসভায় অধিকাংশ কৃষি জমি ও কৃষি নির্ভর। শতকরা ৮৫ ভাগ জনসাধারণ কৃষি নির্ভর। তাই, জনসাধারণ কোনোভাবেই পৌরসভা হিসেবে মেনে নিতে পারছে না।
আমরা পৌরসভার নাগরিক ও প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করেও অত্যন্ত নাজুক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মধ্যে আছি। সমস্ত পৌর এলাকাকে একটি ফিডারের আওতায় নিতে হবে। ফরিদগঞ্জ বাজারকে আলাদা ফিডারের আওতায় নেয়ার সময় মেয়র নিজের বাড়িকে ওই ফিডারের আওতায় নিয়েছেন। তিনি ঠিকই সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ, ওনার বাড়িসহ বাজারের বাইরে যারা আছে পৌর এলাকায় ওইসব/অধিকাংশ এলাকার নাগরিক বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় কাটায়। কেরোয়ার চরগুদুড়ায় বসবাসকারী নাগরিকগণ অবহেলিত জীবনযাপন করছে। তাদের সন্তানগণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা উপযোগী বিদ্যালয় স্থাপন ও ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা মেরামত করতে হবে। বর্তমান মেয়রের সময়কালে ১ ও ২ নং ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়ন দেখা যায়নি। তবে, ১নং ওয়ার্ডে একটি মাত্র সৌচাগার এক বছর আগে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোন অদৃশ্য কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হলেও, সেগুলো এখন পর্যন্ত চালু করতে পারেনি পৌর মেয়র। প্রত্যেকটি টয়লেট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। সমস্ত পৌর এলাকা যেনো একটি ময়লা, আবর্জনার ভাগাড়। যথাযথ পরিকল্পনা তো নেই-ই, অপসারণও করা হয় না। বায়ু দূষণসহ দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। কেরোয়া ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে কসাইখানা থেকে রক্ত-মলমূত্র ডাকাতিয়ার পনিতে পড়ে পানিবাহিত রোগ সর্বত্র ছড়াচ্ছে ও দুর্গন্ধে সেখানে থাকা ও চলাচল করা যায় না। এমন অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে যথাযথ স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডাকাতিয়া নদীতে কচুরিপানা জ্যাম হয়ে পানির প্রবাহ নেই। ফলে, কচুরিপানা পচে পানি দূষণ হচ্ছে, মাছ ও জীব বৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে, নদী তীরবর্তী মানুষ চরম দূষণ ও রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছেন। ডাকাতিয়ায় পৌরসভার সকল ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। পৌর কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে ওই সব ময়লা ফেলা হচ্ছে। মজিদিয়া ট্রাস্ট এলাকা থেকে বিভিন্ন বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা ব্যবহার অনুপযোগী। টিএন্ডটি থেকে ওনুআ ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে ফরিদগঞ্জ বাজারে প্রবেশের সড়ক ও কালির বাজারগামী রাস্তার বেহাল অবস্থা ও ৫নং ওয়ার্ডে কালভার্ট ভেঙ্গে আছে কয়েক মাস যাবত। এমন বহু কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পৌরসভার আয়ের অর্থ ভাগাভাগি হয় বিধায় উন্নয়ন বন্ধ হয়ে আছে। উত্তর কেরোয়ার ভাঙ্গা রাস্তা জনস্বার্থে অচিরেই মেরামত করতে হবে। অন্যথায়, আমরা আগামীতে কঠোর কর্মসূচী নিতে বাদ্য হবো। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুদৃঢ় ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ খেলার মাঠ নির্মাণ করে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গাড়ে তোলা ও মাদক থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি গণমাধ্যমের কাছে আরও বলেন, ফরিদগঞ্জ পৌরসভা নামে ‘ক’ শ্রেণির বাস্তবে ‘গ’ শ্রেণির সুবিধাও নেই বলে জনগণ মত প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, প্রসঙ্গত আপনাদের জানাচ্ছি যে, মেয়রের প্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে পূর্ব ঘোষিত আমাদের আজকের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল ফরিদগঞ্জ বাজারে না করে আমরা কেরোয়া বাজারে মানববন্ধনের মাধ্যমে পৌরবাসীর দাবী উত্থাপন করলাম। আশা করি, নাগরিকদের দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, পৌর নাগরিকের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় আমার প্রেরিত সংবাদ ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার কারণে আমার নাম উচ্চারণসহ ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন বাক্যবানে মিছিল করা হয়েছে। আমাকে রাজাকার আখ্যা ও “জয়বাংলা” স্লোগান দিয়ে বলা হয় “মজিবের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই”।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর আমার জন্ম হয়েছে। অথচ, আমার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছাপিয়ে তা হাতে নিয়ে আমাকে রাজাকার আখ্যা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমার ছবিতে লাল রংয়ের ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ক্রস চিহ্ন দিয়ে আমাকে হত্যার চিন্তা করা হচ্ছে কি না। গণআদালত ও জ্ঞানী মানুষের বিবেকের কাছে এ ব্যপারে আমার প্রশ্ন ও বিচারের ভার রাখলাম। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, ওনারা নীচে নামতে পারেন। আমরা পারবো না। আমরা শালীনতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিবাদ করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি।