চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম সিঙ্গার, ওয়ালটন সহ বিভিন্ন মানুষের সাথে চুক্তি করেও প্রতারনা করার এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি জায়গা দেওয়ার নাম করে, সরকার থেকে ঘর এনে দিবে বলে, সেলাই মেশিন, টিউবওয়েল, দুদ্ধ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ১৫ টাকা ধরে চাউলের কার্ড, জেলে কার্ড, ভিজিবি কার্ড আবার কাউকে বিদেশে পাঠানোর নাম করে ইচ্ছে মত হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সহ এবার সিঙ্গার ওয়াল্টন ও বিভিন্ন মানুষের সাথে চুক্তি করেও করেছে প্রতারনা। সিঙ্গার শোরুমের ম্যানেজার ও ওয়ালটন শোরুমের ম্যানাজার উভয় বকেয়া টাকার জন্য তাকে লিগ্যাল নোটিশ দেন।
১২ সেপ্টম্বর সোমবার চাঁদপুর লেকের পাড় অবস্থিত সিঙ্গার শো রুমের ম্যানাজার ইমরান হোসেন বলেন ২৩ মে ২০২২ তারিখে ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম আমাদের শো রুম থেকে ৩০,৫৭০ টাকা মূল্যের একটি টিভি ৪৪৯০ টাকা নগদ দিয়ে বাকী টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করবে বলে চুক্তি করেন। এর পর থেকে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমাদের ফোন রিসিভ করে নাই, আমরা তাদের বাড়িতে গেলে তার বাড়ি তালা বন্ধ পাই। আমরা ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম থেকে ২৬০৪০ টাকা পাবো, তাই আমরা বাধ্য হয়ে ১৬ মে-২৩ তারিখে তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। আমাদের নোটিশেরও জবাব দেইনি সে। তাই আমরা সিধান্ত নিয়েছি মামলা দিবো।
চাঁদপুর ষোলঘর অবস্থিত ওয়াল্টন প্লাজার ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম ১০ মার্চ ২০২২ তারিখে আমাদের শোরুম থেকে ডধষঃড়হ জবভৎরমবৎধঃড়ৎ ডঋঈ-৩উ৮ এৎড়ংং ৩৪৮ ষঃৎ মডেলের ৫২,১৩৭ টাকা মূল্যের একটি রেফ্রিজারেটর কিস্তিতে ক্রয়করার চুক্তি করেন। ২৪ মার্চ ২০২২ তারিখে হাসিনা বেগম তার বোন আমেনা বেগম কে দিয়ে ২৮৫৬০ টাকা মূলের ৩২” একটি এলইডি টিভি কিস্তিতে ক্রয় করার চুক্তি করেন আবার ১৪ মার্চ ২০২২ তারিখে তার ভাইয়ের বউ রাহিমা বেগমকে দিয়ে ডঋঈ-৩ঋ৫-৩৮০ ষঃৎ মডেলের ৫৫,৭৫৩ টাকা মূল্যের আরেকটি রেফ্রিজারেটর কিস্তিতে ক্রয় করার চুক্তি করেন। আমরা তাদের তিন জন থেকে (হাসিনা থেকে ১৯৬৩৭ টাকা, আমেনা বেগম থেকে ২২৫৬০টাকা, রাহিমা বেগম থেকে ৩৯৮৫৩ টাকা) মোট ৮২০৫০ টাকা পাবো। তারা আমাদের টাকা পরিশোধ করে নাই। আমরা আমাদের এরিয়া ম্যানাজার সহ তার বাড়ি গেলে জানতে পারি সে সবগুলো পণ্য নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা তাকে ২ টা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম আমাকে ও আমার আইনজীবীকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আমরা আমাদের কোম্পানির আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দিবো।
খালেদ হোসেন শেখ নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম তার স্বামী প্রবাসে দোকান কিনার কথা বলে ১৮/০৯/২০২২ তারিখে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার লিখিত স্টাম্পে অঙ্গীকারনামা দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা ধার নেন। কথা ছিল ১৯/০৪/২০২৩ তারিখে সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দিবে। কিন্তু আমার টাকা দেই দিচ্ছি বলে দেইনি। টাকা চাইলে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকলে আমি ৯/০৮/২০২৩ তারিখে কোর্টে ৪০৬/৪২০ ধারায় ৬৪৯ নং সি আর মামলা করি।
লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের সকল ইউপি সদস্যদের হাসিনা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার ভূমি (চাঁদপুর সদর) হেদায়েত উল্ল্যাহ শুনানি দিন ধার্য করলে ৫৪ জন ভুক্তভোগী এসে লিখিত অভিযোগ পেশ করেন। কিন্তু হাসিনা বেগম শুনানিতে উপস্থিত না হয়ে হঠাৎ করে একটি অনলাইনে লাইভে এসে বলেন ৫৪ জন ভুক্তভোগী নাকি ৫০০টাকা করে পাওয়ার বিনিময়ে এসেছে, ইউপি সদস্যরা নাকি তাকে পরিষদে আসতে দেয়নি, সে জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভোগতেছে। কিন্তু ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে জানা যায় ভিন্ন কথা। ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম এর প্রতারনা থেকে বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী, অসহায় সহ সব শ্রেণীর মানুষ। একেক জনের একেক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মিথ্যা প্রতুস্তির বিনিময়ে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা। দু’পা অচল প্রতিবন্ধী রহিমা খাতুন বলেন আমি ভিক্ষা করে খাই, মানুষের সহযোগিতায় চলি, হাসিনা মেম্বার আমাকে ঘর দেওয়ার নাম করে ৬০ হাজার টাকা নেন,আমি ধারকর্য করে টাকা দেই। ঘর বা আমার টাকা না দেওয়াতে আমি এসিল্যান্ড অফিসে অভিযোগ করতে গেছি, কারো টাকার বিনিময়ে না। প্যারালাইসে আক্রান্ত রাজিয়া বেগম বলেন হাসিনা বেগম আমাকে প্রতিবন্ধী কার্ড ও ভিজিবি কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। সে কিছুই করে দেয়না। আমি আমার কষ্টের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় নিজের টাকা খরচ করে এসিল্যান্ড অফিসে অভিযোগের জন্য গেছি।
জান্নাত আক্তার নামে এক জন বলেন হাসিনা মেম্বার আমাকে সেলাই মেশিন ও টিউবওয়েল দিবে বলে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা সবাই ভুক্তভোগী ঐদিন এসিল্যান্ড অফিসে গেছি, অতচয় সে লাইভে এসে কার কল রেকর্ড শুনালো, আমরা নাকি ৫০০ টাকার বিনিময়ে গেছি। আমরা তার নাম্বার চাই, এই নাম্বার এসিল্যান্ডে জমা দেওয়া হোক।
ছলেমা খাতুন নামে এক জন বলেন কুরবানী দেওয়ার নাম করে হাসিনা বেগম ২০ হাজার টাকা আমার থেকে ধার নেয়, পরে ২ টি টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার সহ মোট ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা চাওয়াতে মামলার শিকার হতে হয়েছে আমাকে ও আমার স্বামীকে।
লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরা বলেন হাসিনা মেম্বার আমাদের সকল ইউপি সদস্যদের সম্মান হানি করেছে। আমাদের ইউনিয়নের বদনাম করেছেন। বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই সে লজ্জায় পরিষদে আসে না।
এলাকাবাসী থেকে জানা যায় হাসিনা মেম্বার বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋীন নিয়েছে, বিভিন্ন মানুষ থেকে প্রতারনা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, বিভিন্ন কোম্পানীর মালামাল বাকীতে নিয়েছে, বিভিন্ন মানুষকে বিদেশে পাঠানোর নাম করেও লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাই টাকার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ তার বাড়িতে আসে। নিরাপত্তা হীনতায় ভোগছে বলে কান্নাকাটি করে সে কি বুজাতে যাচ্ছে এলাকাবাসী তা জানতে চায়? মানুষের পাওনা টাকা কি মানুষ চাবে না? বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে টাকা ধার করে বিনিময়ে স্টাম্প ও চেক দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে মামলাও দিয়েছে। মামলার ভয়ে ও মানুষের টাকা না দেওয়ার জন্য এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে বেড়াছে। তার প্রতারনার শাস্তিত তাকে দেশের প্রচলিত আইনে পেতেই হবে।
বৃদ্ধ কৃষক ফজল খান বলেন হাসিনা মেম্বার আমার ছেলেকে ৩৭ শতাংশ জমি কট দেওয়ার কথা বলে একটি কাটিজ পেপারে সাইন করে ১ বছরের জন্য ৫০ হাজার টাকা, আরেক দাগে ২৫ হাজর টাকা নেন। আমাদের জমিও চাষ করতে দেয়না পাওনা টাকাও ফেরত দেয় না। চাইলেই বলে মামলা দিবে।
ঢালীঘাটের মের্সাস শান্ত টেড্রার্স এর মালিক আব্দুল সালাম বলেন হাসিনা মেম্বার ১বছর পূর্বে আমার নিকট থেকে বাড়ি করার জন্য রড়, সিমেন্ট, বালু নিয়েছে। আমি তার নিকট থেকে এখনো ৯২,৩০০ টাকা পাবো। টাকা চাইতে গেলে মামলা করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি আমার পাওনা টাকা পাওয়ার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিবো।