চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম জনগন থেকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীগন।
১৭ সেপ্টম্বর রবিবার দুপুরে ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড হাসিনা বেগম এর বাড়ি সংলগ্ন কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তার পাড় ভুক্তভোগীগন এই মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী বলেন হাসিনা বেগম সরকারি জায়গা দেওয়ার নাম করে, সরকার থেকে ঘর এনে দিবে বলে, সেলাই মেশিন, টিউবওয়েল, দুদ্ধ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ১৫ টাকা ধরে চাউলের কার্ড, জেলে কার্ড, ভিজিবি কার্ড আবার কাউকে বিদেশে পাঠানোর নাম করে আমাদেরকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইচ্ছে মত হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে আমাদেকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। মেম্বার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা, সর্ব মহলে তার অনেক গ্রহন যোগ্যতা এবং বিভিন্ন সরকারি বড় বড় মানুষের সাথে তার ওঠাবসা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার নাকি তার ক্ষমতা আছে, এই সব বুঝিয়ে আমাদের মত সহজ সরল মানুষদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমরা টাকা চাইতে গেলে টাকা ফেরতৎ না দিয়ে বরং আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে এবং অনেকে টাকা চাইতে গিয়ে তার মামলায় শিকার হতে হয়েছে।
আমরা তার মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চাই, মিথ্যা প্রতুশ্রুতি দিয়ে আমাদের নিকট থেকে যে টাকা নিয়েছে তা ফেরত চাই। সে বিভিন্নএনজিও থেকে ঋীন নিয়েছে, বিভিন্ন মানুষ থেকে প্রতারনা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, বিভিন্ন কোম্পানীর মালামাল বাকীতে নিয়েছে, বিভিন্ন মানুষকে বিদেশে পাঠানোর নাম করেও লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাই ভুক্তভোগীগন তার সন্ধানে প্রতিদিন তার বাড়িতে আসে। এজন্য সে কৌশল করে নিরাপত্তা হীনতায় ভোগছে বলে বেড়াছে। মানুষের পাওনা টাকা কি মানুষ চাবে না? বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে টাকা ধার করে বিনিময়ে স্টাম্প ও চেক দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে মামলাও দিয়েছে। মামলার ভয়ে ও মানুষের টাকা না দেওয়ার ধান্দায় এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে বেড়াছে। তার প্রতারনার শাস্তিত তাকে দেশের প্রচলিত আইনে পেতেই হবে। মাননীয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহ কারে আমলে নিবে বলে আমরা মানববন্ধনে উপস্থিত ভুক্তভোগীগন বিশ্বাস করি এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের টাকা ফেরত পাবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মানববন্ধনে উপস্থিত রিক্সশা চালক আবু তাহের হাওলাদার বলেন হাসিনা বেগম আমাকে ঘর দিবে বলে ৯০ হাজার টাকা নেন। ছেলে সন্তানদের নিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সে একটু সুখে থাকার জন্য ঋণ করে তাকে ৯০ হাজার টাকা দেই। ঘরত সে দেইনি বরং টাকা চাইতে গেলে মামলার হুমকি দেয়।
অসহায় দিনমজুর আমিন দেওয়ান বলেন হাসিনা বেগম আমাকে বিদেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাগজ করে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নেন। আজ কয়েক বছর হয়ে গেল। বিদেশ পাঠাবেত দুরের কথা বরং আমার টাকা আমি চাওয়াতে সে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছে। তার কারনে আমার পরিবার টা আজ পথে বসেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
ছলেমা খাতুন নামে ভুক্তভোগী বলেন কুরবানী দেওয়ার নাম করে হাসিনা বেগম ২০ হাজার টাকা আমার থেকে ধার নেয়, পরে ২ টি টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে আরো ২০ হাজার সহ মোট ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা চাওয়াতে মামলার শিকার হতে হয়েছে আমাকে ও আমার স্বামীকে।
খালেদ হোসেন শেখ নামে একজন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেন ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম তার স্বামী প্রবাসে দোকান কিনার কথা বলে আমার নিকট থেকে ১৮/০৯/২০২২ তারিখে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার লিখিত স্টাম্পে অঙ্গীকারনামা দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা ধার নেন। কথা ছিল ১৯/০৪/২০২৩ তারিখে সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দিবে। কিন্তু আমার টাকা দেই দিচ্ছি বলে দেইনি। টাকা চাইলে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে হাসিনা বেগম। তাই আমি ৯/০৮/২০২৩ তারিখে কোর্টে ৪০৬/৪২০ ধারায় তার বিরুদ্ধে ৬৪৯ নং সি আর মামলা করি। আমি এই ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়াতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভুক্তভোগী এসে বিচার দিয়ে যায়। আমি মাননীয় জেলা প্রশাসকের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি আপনি তদন্তপূর্বক এই হাসিনা বেগম এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করুন। আর কোন মানুষ যেন তার প্রতারনার শিকার হতে না হয়।
উল্লেখ্য যে ১০ নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের ১১ জন ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সরকার ও ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কারনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার এর নিকট লিখিত অনাস্থা দেন। এটি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনার ভুমি (চাঁদপুর সদর) মোঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ’কে দায়িত্ব দেন। ৫ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার ভুমি শুনানির দিন ধার্য করলে এসিলেন্ট অফিসে ১১ জন ইউপি সদস্য ও ৫৪ জন ভুক্তভোগী উপস্থিত হয়ে লিখিত বক্তব্য দিলেও হাসিনা বেগম শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। তদন্তটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।