সবুজ পাতার নিচে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি সোনালি ও সাদা রংয়ের আখ। কৃষকেরা অল্পপুজি ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে। এ বছরে বৃষ্টি কম হওয়ায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। আখের বাম্পার ফলন হওয়ায় একদিকে যেমন কৃষক খুশি। তেমনি দাম পেয়ে মিষ্টি আখের মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে চাষিদের মুখে। এতে করে এবার সাফল্যের মুখ দেখছে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার আখ চাষিরা। আখের বাম্পার ফলন হওয়ায় অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। এতে করে দিন দিন বেড়েই চলছে এ উপজেলাতে আখের চাষ।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আখ চাষীরা আখ কাটা ও গাড়ীতে উঠানো নিয়ে ব্যস্ত । ছোট ও বড় সাইজের প্রতি পিস আখ খুচরা বাজারে ১০ থেকে ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে পুরো উপজেলায় ২শ ৮০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু কৃষকরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২শ ৯০ হেক্টরের বেশি জমিতে আখ চাষ করেন। বিশেষ করে উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ৬ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আখ চাষ করা হয়েছে। আখ আবাদের এলাকাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ১ নং বালিথুবা (পশ্চিম) ২ নং বালিথুবা (পূর্ব), ৭ নং পাইকপাড়া (উত্তর) ৮ নং পাইকপাড়া (দক্ষিন) ৯ নং গোবিন্দপুর (উত্তর) ১৫ নং রুপসা (উত্তর) ও ১৬ নং রুপসা (দক্ষিন) ইউনিয়ন এবং পৌরসভার কিছু কিছু জায়গায় আখ চাষ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী আখ আবাদ করা হয়েছে ১ নং বালিথুবা (পশ্চিম) ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে মোট ২০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে রং বিলাস, চাঁদপুর গ্যান্ডারি, ঈশ্বরদী, মানিকগঞ্জ ২০৮ জাতের আখ চাষ বেশি হয় বলে আখ চাষীরা জানিয়েছেন।
আখের পাইকাররা বলেন, জমিন থেকে আখ তুলে শ্রমিকের পয়সা এবং পরিবহন খরচ দিয়ে আমাদের বেশি একটা লাভ হয় না। ফরিদগঞ্জ উপজেলার আখ বিশেষ করে কুমিল্লা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় নিয়ে পাইকারগন বিক্রি করেন। এখানকার আখ বিক্রি করতে আমাদের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
বালিথুবা ইউনিয়নের বালিথুবা গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বরকন্দাজ জানান, তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে আখ চাষ করছেন। আখ চাষের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও পূর্ব পুরুষরা যেভাবে করেছেন, তিনিও সেভাবেই চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে নতুন জাতের রঙ্গ বিলাস আখের চাষ করেছেন। নতুন জাতের এ আখের ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। দেশিয় জাতের আখের চাইতে রঙ্গ বিলাস আখের বাজার দর অনেক বেশি। প্রতিটি আখের খুচরা দাম ৫০ টাকা।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার এলাকার কৃষক বাবুল জানান, তিনি আখ চাষের পাশাপাশি ব্যবসাও করেন। একটি জমিতে চাষ করা আখ দাম করে কিনে নেন তিনি। পরে এসব আখ ভিবিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। দেশিয় এবং ঈশ্বরদী-২৪ জাতের আখ বেশির ভাগ চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বিক্রি হয়। ঈশ্বরদী-২৪ জাতের আখ বেড়িবাঁধের বাইরে পানির ভেতরেও চাষাবাদ করা সম্ভব।
আখ চাষীদের মধ্যে ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের দক্ষিণ মদনের গাঁওয়ের এমরান খান জানান, তিনি এবার মোট ৩শ শতাংশের মধ্যে আখ চাষ করেছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে আখের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন এ বছর তাঁর ৭ – ৮ লক্ষ টাকা আখ বিক্রি করতে পারবেন ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের আখ চাষীদের জন্য কোনরকম সহযোগীতা করছে না বলে আখ চাষীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আখ চাষীরা বলেন, এবারের মৌসুমে আখের ভালো ফলন হয়েছে। ছোট-বড় সাইজের প্রতি পিস আখ বাজারে নিয়ে বিভিন্ন সাইজের আখ ১০ থেকে ৬০/৭০ টাকা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করছে। দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুব খুশি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাকিল খন্দকার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর ২শ ৮০ হেক্টর জমিতে আখ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও এবার ২শ ৯০ হেক্টরের বেশি জমিতে আখ চাষের আবাদ করা হয়েছে।