কর্মস্থল যেখানেই হোক মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন পুলিশ সদস্য মোঃ আবুল হোসেন মানিক। পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি তাঁর মানবিক কাজ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে। অভিভাবকহীন অসহায় দুস্থদের নিয়মিত সেবা করছেন তিনি।
বিনা চিকিৎসায় পথে-ঘাটে পড়ে থাকা দুস্থদের নিজ খরচে সেবা করে আসছেন। এ পর্যন্ত ২২জন ভবঘুরে মানসিক বিকারগ্রস্তকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন এ পুলিশ সদস্য। গতকাল ৩ ইং অক্টোবর মঙ্গলবার চাঁদপুর কালিবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মানিককে ঘিরে আছেন কয়েকজন। সবার মধ্যে একটা উল্লাস বিরাজ করছে। কারণ স্টেশনে থাকা ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন তিনি। প্রতিনিয়তই চলে তার এমন কর্মকান্ড৷ এ ধরনের কাজ করতে তার ভালো লাগে বলে জানান।
মানব সেবার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানিক বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। কখনো কাউকে ফেলে যেতে পারি না। যতটুকু পারছি সাহায্য করছি। মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে আমি প্রস্তুত।
পুলিশ সদস্য মানিক মানবিক পুলিশ নামে বেশ সুপরিচিত। মানবিক পুলিশ হয়ে উঠার পেছনের গল্প শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবায় বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন ডাক্তার, পুলিশ, অ্যাডভোকেট, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ইত্যাদি। তারা যখন তাদের পেশার বাইরে থেকে কোনো গরীব, দুঃখী, অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে, সেগুলো মানবিক কাজ। যেমন আমি পুলিশ কনস্টেবল, আমার কাজ হচ্ছে , আইন শৃঙ্খলা, মানুষদের রক্ষা করা, । কিন্তু আমি যখন এগুলোর পাশাপাশি গরীব, দুঃখী, অসহায় মানুষের সেবা করি বা তাদের জন্য কাজ করি, তা হচ্ছে মানবিক কাজ।’
রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায়দের দেখলে প্রয়োজন হলে ওষুধ বা নগদ টাকা এবং রাস্তার অনাহারে থাকা মানুষকে খিচুড়ি, আপেল, পাউরুটি, কলা, বিশুদ্ধ পানি ও -সবটুকুই তিনি তার সাধ্যমতো সরবরাহ করে আসছেন। আর এর সবটুকুই তাঁর বেতনের টাকায়।
একজনের পক্ষে সব মানুষের সেবা করা কঠিন। মানিকের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের মনির উদ্দিন হাজ্বী বাড়ির মোঃ রুহুল আমিনের ছেলে। বর্তমানে মানিক চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগদান করেন তিনি।
জানা যায়, চাঁদপুর জেলা পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত মানিক। এরআগে চাকুরীর সুবাদে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ছিলেন তিনি। যেখানে ছিলেন মানবিক কর্মকান্ড চালিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত ৪৩জন ভবঘুরে মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগীকে নিজ অর্থায়নে রিহ্যাব সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়েছেন। তার মধ্যে ২২জনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন মানিক। এদের মধ্যে ২৩বছর পর ভুট্টু দেওয়ান, ১৩বছর পর হাবিবুর ও ৬বছর পর মোঃ টিপুকে ফিরে পেয়েছে তাদের পরিবার।