সারাদেশে কাউন্সিলের পাশাপাশি প্রার্থীও বাছাইয়ের কাজটি এগিয়ে রাখছে সংসদে না থেকেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। পরিস্থিতি পাল্টে গেলে দ্রুততার সঙ্গে যাতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়, সেদিকটায় নজর দিচ্ছে দলের হাই কমান্ড।
অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে প্রার্থীর সংখ্যা এবার বাড়বে বলেই মনে করছেন দলটির নেতারা। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক অবস্থায় থাকতে চান ক্ষমতাসীনেরা। তাই কয়েক ধাপে জরিপের পর প্রার্থী চূড়ান্ত করবনে দলপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, অন্য রাজনৈতিক দলেও চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। বিএনপির সঙ্গে জোট বেধে ক্ষমতায় স্বাদ পাওয়া জামায়াত ইসলামীরও চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। এছাড়া জাতীয় পার্টিও ভেতরে ভেতরে গুছিয়ে রাখছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটি। যদিও দলের প্রধান দুই নেতার দ্বন্দ্বে, অস্বস্তির মধ্যে আছে সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি।
বিএনপি বর্তমানে নির্দলীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলন করছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনে সফল সমাপ্তি চায় দলটি। সেই পরিকল্পনা নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি। ইতিমধ্যে তারা প্রায় সব আসনে প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা যাচ্ছে লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের কাছে। চিঠি দিয়ে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। পদধারী কেউ রাজপথে অপারগ হলে তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমাদের এখন এক দফা দাবি সরকারের পতন বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তারপরও যদি আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তাহলে সেখানেও প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন নয়, আমরা চাইলে প্রতি আসনে দুই থেকে তিনজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা আছে। হয়ত সর্বোচ্চ ৫০-৬০টি আসনে নতুন করে প্রার্থী নিয়ে ভাবতে হবে। অন্য আসনগুলোতে সবকিছু চূড়ান্ত করা আছে।’
বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই বলে যে কথা রাজনীতির মাঠে আছে, তা অপপ্রচার হিসেবেই দেখছেন দলটির এই নেতা।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিয়মিত এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেয়া, দলের সাবেক নেতা-কর্মীদের কবরে শ্রদ্ধা জানানো, জনসংযোগ, নির্বাচনি পরিকল্পনা থেকে অনেক কিছুই স্থানীয় পর্যায়ে সেরে রাখছেন। অনেকেই মনে করছেন, গতবারের মতো এবার মনোনয়ন নিয়ে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। আর ঘরে বসে থাকা অনেক সিনিয়র নেতাও এবার মনোনয়ন পাবেন না। জানা গেছে, সবকিছু লন্ডন থেকে ঠিক করছে তারেক রহমান। তার কাছে স্থানীয় পর্যায় থেকে সব তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই আগে রাজপথ, পরে নির্বাচনের দিকে জোর দিচ্ছে দলটি।
বিএনপির বরিশালের (উত্তর) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। এখন আমাদের ভাবনায় শুধুই আন্দোলন ও সরকারের পতন। হ্যাঁ, তারপরও যদি পরিস্থিতি অনূকূলে আসে তাহলে ভোটের মাঠে কোনো অসুবিধা হবে না।’
৩০০ আসনে বিএনপির অন্তত এক হাজার প্রার্থী আছেন দাবি করে তৃণমূলের এই নেতা বলেন, ‘তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা তো দলের প্রতিটি ইউনিটে কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি। ফলে ভোটের মাঠে কাজ করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীও প্রস্তুত আছেন। এখন শুধু প্রয়োজন একটা সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করা।’
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আলাপকালে বলেন, “৩০০ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ২০০ প্রার্থীর খসড়া রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে। শুধু নির্দেশের অপেক্ষা। দলের নির্দেশনা পেলে প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়বেন।’
অন্যদিকে, এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। বিদ্রোহী ও বহিষ্কৃতদের একে একে ক্ষমা করে নির্বাচনী মাঠে নামাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তৃণমূলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি অনুসারেই এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, আগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে অনেকেই এবার পাবেন না মনোনয়ন। এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যেও অনেকে মনোনয়ন পাবেন না, এমন কথা বেশ জোরের সঙ্গে শোনা যাচ্ছে। তবে সেই তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা তো ভোটের মধ্যেই আছি। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন। রাজপথের কর্মসূচির পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত জনসংযোগ করছেন।’
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় আগ্রহী প্রার্থী অনেক বেশী হতে পারে, সেক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের সামাল দিতে কী ভাবছে আওয়ামী লীগ? এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটা রাজনৈতিক দলে একটি আসনে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হতে চাইবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেওয়ার পর এসব বিদ্রোহ আর থাকবে না। সবাই দলের পক্ষেই কাজ করবেন। বিদ্রোহ করে অনেকেই দল থেকে ছিটকে গেছেন। আর ৪-৫ ধরনের জরিপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ফলে তার কাছে তো সব ধরনের রিপোর্ট আছে। যার পাশ করার সম্ভাবনা আছে তিনিই মনোনয়ন পাবেন’
বিএনপির পাশাপাশি রাজপথে আছে আওয়ামী লীগও। প্রতিদিনই দলটি নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে না ধরনের কর্মসূচিও নিচ্ছেন দলটির নেতারা। তবে অন্তর্কোন্দল দলটিকে ভোগাতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ে, এটা সত্যি। কিন্তু নৌকা যিনি পাবেন তার পক্ষেই থাকবে নেতাকর্মীরা। কেউ যদি বিদ্রোহী হন তিনি আসলে টিকতে পারবেননা। ফলে সবার চেষ্টাই মনোনয়ন পাওয়ার। যে নৌকা পাবে আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই মাঠে থাকব।