এইচ এম আরিফ হোসেন//
চাঁদপুর সদর উপজেলা ১০ নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম জনগনকে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এনে দেওয়ার নাম করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক গুরুতর অভিযোগ উঠে।
এই বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই পড়তে হয় হাসিনার মিথ্যা একাধিক মামলায়। বিষয়টি ভুক্তভোগীরা ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খানকে জানানে চেয়ারম্যান সকল ভুক্তভোগীর তালিকা করে ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম’কে তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম টাকা ফেরত দেওয়ার কথা শিকার করেও নাম মাত্র কয়েক জনকে দিয়ে গড়ে তোলেন প্রতারণার বিশাল সাম্রাজ্য। কেউই দাবিয়ে রাখতে পারে না, তার প্রতারণা। তার প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী, অসহায় ও দিনমজুরা। সরকারি জায়গা দেওয়ার নাম করে, সরকার থেকে ঘর এনে দিবে বলে, সেলাই মেশিন, টিউবওয়েল, দুদ্ধ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ১৫ টাকা ধরে চাউলের কার্ড, জেলে কার্ড, ভিজিবি কার্ড করে দিবে বলে যার থেকে যত ইচ্ছে মত হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম। নিয়ম বহির্ভূত, সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে জনগণের থেকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা সংগ্রহ করার কারণে ইউনিয়নের ৯ ইউপি সদস্য ২ মহিলা ইউপি সদস্য সহ ১১ জন সদস্য মাসিক মিটিং এ রেজুলেশন করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অনাস্থা দেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনার ভূমি (সদর) মোঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ’কে দায়িত্ব দিলে তিনি গত আগস্ট মাসে মাঝামাঝি ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি তদন্তে যান। ওই সময় ইউপি সদস্য ও ভুক্তভোগীরা উপস্থিত থাকলেও ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম পরিষদে না এসে সহকারী কমিশনার ভুমি (চাঁদপুর সদর) কার্যালয়ে আসবে বলে যানান।
৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দ্বিতীয় শুনানির তারিখ ধার্য হলে সকাল ৯ ঘটিকা থেকে ভুক্তভোগীরা এসিল্যান্ড কার্যালয়ে আসতে শুরু করে। এ সময় ৫৪ জন ভুক্তভোগী সহ ১১ জন ইউপি সদস্য সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ হেদায়েত উল্ল্যার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের লিখিত বক্তব্য দেন। এই দিনও ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম নির্দিষ্ট সময়ে শুনানিতে উপস্থিত হয়নি।
ভুক্তভোগী উপস্থিত ৫৪ জন থেকে জানা যায় লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ ওয়ার্ড সহ ইউনিয়নের অন্যান ওয়ার্ড এবং পাশের ইউনিয়ন সহ প্রতারনা করে মোট ১৮ লক্ষ ৮ হাজার ৫ শত টাকা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই প্রতারক হাসিনা হাতিয়ে নেন। এমনকি কোরবানি দেওয়া নাম করে এক জন থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋীন নিয়ে তা আর পরিশোধ করেননি। প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় টাকা চাওয়াতে পড়তে হয়েছে অনেককেই একাধিক মামলায়।
৫নং ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী তাসলিমা বেগম কে ঘর দেওয়ার নাম করে নেন ৬০ হাজার টাকা, দু পা অচল প্রতিবন্ধী রাজিয়া কে প্রতিবন্ধী কার্ড করার নাম করে নেন ১০ হাজার টাকা , ৪নং ওয়ার্ডের খালেদা বেগমকে ঘর ও জায়গা দিবে বলে নেন ১ লক্ষ টাকা, ৫নং ওয়ার্ডের আমিন দেওয়ান কে জায়গা, ঘর ও বিদেশ পাঠাবে বলে ২.৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন, একই ওয়ার্ডের বুলু বেগমকে ঘর ও টিউবওয়েল দেওয়ার নাম করে নেন ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা, আনোয়ারা বেগমকে টিউবওয়েল ও সেলাই মেশিন দিবে বলে নেন ১৬ হাজার টাকা, মুন্নি বেগম থেকে মাতৃতকালীন ভাতা করে দিবে বলে নেন ২ হাজার টাকা। এই রকম ৫৪ জন থেকে সরকারি বিভিন্ন সু্বিধা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেন এই প্রতারক।
এই বিষয়ে ইউনিয়নের ৯ ইউপি সদস্য ও ২ মহিলা ইউপি সদস্য সহ ১১ জন জানান হাসিনা বেগম নিয়ম বহির্ভূত সরকার ও ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণ থেকে যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে অবৈধ। হাসিনা বেগম সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় আমরা ইউপি সদস্যরা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার এর নিকট লিখিত অনাস্থা দেই। আমরা এই ইউপি সদস্যের বহিষ্কার সহ শাস্তি চাই।
তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ভুমি (চাঁদপুর সদর) মোঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন ১০নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম এর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যরা লিখিত অভিযোগ দিলে তা তদন্তের জন্য আমাকে দেওয়া হয়। আজ আমি শুনানির দিন ধার্য রাখলে ইউপি সদস্য ও ভুক্তভোগীরা আসলেও হাসিনা বেগম নির্দিষ্ট সময় আসেনি। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বিকালে হাসিনা বেগম এসে আমার সাথে দেখা করে। তখন শুনানি নেওয়া সম্ভব হয়নি। হাসিনা বেগম তাদের বিরুদ্ধে অনেক গুলো অভিযোগ দিলেও তবে কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। আমার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন, আমি শীঘ্রই উপজেলা নির্বাহি অফিসার এর বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দিলেই সকল সত্য সবাই জানতে পারবে।
এই বিষয়ে হাসিনা বেগমকে না পাওয়াতে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Discussion about this post