শোভিত গোলাপের ডালে ভ্রমরের অভিসার আর গন্ধরাজ-বেলীর মন মাতানো সৌরভে নির্মল আনন্দের ছড়াছড়ি। সবজির মাচায় দোয়েল-ফিঙের লুকোচুরি, শান বাঁধানো ঘাটলায় টুপটাপ শব্দে মাছেদের আলাপন। নৈসর্গিক শোভায় মানসপটে ফুটে উঠা স্নিগ্ধতায় সেখানে
নিজেকে মুঠোফোনের ফ্রেমে আটকান আগতরা।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা ভূমি অফিস যেন গ্রীষ্মের রুদ্ররূপে এক পশলা বৃষ্টির প্রশান্তি। সেখানকার অনাবাদি জমিতে গড়ে উঠা বিভিন্ন ফুলের সমারোহ, ফল, সবজি ও মাছের খামারের শোভা ছড়ানো নান্দনিকতায় আকৃষ্ট হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা ছাড়াও আশপাশের মানুষ।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরীর নিজ হাতে গড়া বাগানে উৎপাদিত সবজি ও মাছে এ কার্যালয়ের অনেকের দৈনন্দিন চাহিদা মিটছে।
জানা যায়, শাহরাস্তি পৌরসভার সাহাপুর এলাকায় অবস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে মূল ফটক থেকে শুরু করে ভবনের আশপাশে লাগানো হয়েছে ১৫ জাতের গোলাপ, রঙন, জবা, কসমস, ডালিয়া, মর্নিং গ্লোরি, পর্তুলিকা, টগর, গাঁদা, ৬ জাতের বাগান বিলাস,
বিভিন্নজাতের পাতাবাহার ও ইনডোর প্ল্যান্টসহ নানা ফুলের গাছ। ভবনের ছাদ, সামনে ও আশপাশের দৃষ্টিনন্দিত পরিবেশে একটি সেলফি তোলা যেন এখানে আগত দের কাজের অংশ হয়ে গেছে।
পুকুরে বেড়ে উঠা মাছ, পাড় ও কার্যালয়ের আঙ্গিনায় খালি পড়ে থাকা জমিতে বেড়ে উঠছে
লম্বা বেগুন, তাল বেগুন, দেশি বেগুন, বিজলি মরিচ, ক্যাপসিকাম ,ধাউন্যা মরিচ, কামরাঙা মরিচ, বাতাসা মরিচ, ফুলকপি, বাঁধা কপি, মূলা
লালশাক, পালং শাক, কলমি শাক, ডাটা শাক , পুঁই শাক, সরিষা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, টমেটো, চেরি টমেটো, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, লাউ, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, সজনে, শসা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, থানকুনি ও পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমি সবজি গাছ।
ভবনের পূর্ব পাশে রয়েছে আমলকি, লেবু, জাম্বুরা, বহেরা, জলপাই, হরিতকি, নিম, সফেদা, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ।
এ কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এটি যেন একটি খামার বাড়ি! শাক সবজি ও ফুলে ভরে উঠেছে চারপাশ। যে কেউ এখানে আসলেই যেন মনপ্রাণ ভরে উঠে। কাজে আসা লোকজন নিজের কাজ সারার আগেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুখরিত হয়ে উঠেন। নিজের ক্লান্তি কিছুটা দূর করে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাড়ি ফিরেন। একটি প্রশাসনিক কার্যালয়ের আঙ্গিনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে কতটা দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।
কার্যালয় পার্শ্ববর্তী ঘুঘুশাল গ্রামের বাসিন্দা সমীরণ দত্ত জানান, এখানে ১/২ বার সেবা নিতে এসে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গেছি। সেজন্য মনের খোরাক মেটাতে দর্শনার্থী হয়ে বারবার ঘুরে যাই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজ হাতে বাগানের পরিচর্যা করছেন সহকারী কমিশনার। কাজের ফাঁকে একটু ফুসরৎ পেলেই তিনি এভাবে বাগানে ছুটে যান বলে জানিয়েছেন ভূমি অফিসে কর্মরত রবিউল আউয়াল ও রাম প্রসাদ ত্রিপুরা। তারা আরও জানান, সহকারী কমিশনার নিজেই এ প্রাঙ্গণের প্রতিটি গাছের যত্ন নিয়ে থাকেন। জমি প্রস্তুতে দফতরের অন্যান্য কর্মচারীরা সহায়তা করে থাকেন।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা চৌধুরী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ছিল এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। এই অনুশাসনকে নিয়েই আমি আমার এ প্রজেক্টটি শুরু করি। উপজেলা ভূমি অফিসে যে অনাবাদি জমি ছিলো সেটা কাজে লাগিয়ে আমি এ বাগান গড়ে তুলেছি।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজের ব্যস্ততম ছকবাঁধা কাজের বাইরে সুযোগে পেলেই বাগানে সময় দান তাঁর মননশীলতা ও সৃষ্টিশীল মানসিকতার প্রকাশ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
Discussion about this post