রসাল এই ফলটি কার না পছন্দ! মহল্লার ফলের দোকানে এখনকার মৌসুমি ফল বরই, সফেদা, নানা পদের কলা, স্ট্রবেরি, পেয়ারা কমবেশি আছে লক্ষ করলাম। তবে তরমুজ আছে অপেক্ষাকৃত বড় দোকানগুলোতে। কারণ জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, মোকামে তরমুজের দাম বেশি।
তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ট্যাঁকে তরমুজ কেনার মতো পুজি নেই। যাঁরা একটু বড় ব্যবসায়ী, তাঁরাই দোকানে তরমুজ তুলতে পারছেন। তরমুজের এক দাম। কোনো নড়চড় নেই। কেজি হিসাবে নিলে ৮০ টাকা। অবশ্য পিস হিসাবেও যে বিক্রি হচ্ছে না তা একেবারে বলা যাবে না, কেউ কেউ বিক্রি করছেন।
তরমুজের দাম নিয়ে বিস্তারিত আলাপের আগে বলে নিই, কোনো ফলের দামই কম নয়। সম্প্রতি মাননীয় এক মন্ত্রী ইফতারের প্লেটে দেশি ফল বরই রাখতে বলেছেন, সে বস্তুটির কেজিও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। পেয়ারাও কাছাকাছি দাম। সরু সরু সাগর কলা প্রতি ডজন ১২০ টাকা কমপক্ষে। স্ট্রবেরি সাড়ে ৩০০। হালি ৪০ টাকার নিচে কোনো লেবু নেই, কদিন আগেও যা ছিল ২০ টাকা। শসা-খিরা ১০০, পাকা পেঁপে ২০০ টাকা কেজি। এ লেখায় আপেল, আনার, কমলা, আঙুরের কথা নাই–বাআনলাম।
যাঁরা মনে করছেন, এ তো ঢাকার দাম। গ্রামের মানুষেরা নিশ্চয়ই সুখে আছেন! কম দামে পাচ্ছেন। এমন ধারণা একদম ভুল। গ্রামে-মফস্সলেও দাম কমবেশি সমান। কিছু কিছু ফলের দাম বরং গ্রামে আরও বেশি। কুষ্টিয়া থেকে প্রথম আলোর রিপোর্টার তৌহিদী হাসান জানান, সেখানে আজ মঙ্গলবার প্রতি কেজি শসার দাম ১০০ টাকা। লেবুর দাম জিজ্ঞাসা করতেই ভয় পাচ্ছেন তিনি! বাগেরহাটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আহাদ হায়দার ফেসবুকে লিখেছেন, পাকা পেঁপের কেজি সেখানে ১৮০ টাকা।এবার তরমুজের প্রসঙ্গে আসা যাক। তরমুজ আমাদের দেশি ফল। এই মাটিতেই জন্মে। বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চল-পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠিতে প্রচুর হয়। সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার কয়রাসহ দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের ভালো ফলন হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও তরমুজের আবাদ হচ্ছে।
তরমুজ কৃষকেরা উৎপাদন করেন। এরপর পাইকারেরা তা কিনে প্রধানত ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বাজারে মোকামে নিয়ে তোলেন। কখনো কখনো বড় কৃষকেরা সরাসরি ট্রাক ভাড়া করে ফল শহরে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে খুচো ব্যবসায়ীরা কিনে আনেন। তাঁদের কাছ থেকেই
তরমুজ কেনেন সাধারণ ক্রেতারা।
সাধারণত ডিসেম্বর মাসে তরমুজের আবাদ করা হয়। ফল উঠতে উঠতে এপ্রিল।
এরপর মে মাসজুড়ে মাঠে তরমুজ থাকে। তাই পরিপক্ক তরমুজ উঠতে উঠতে চৈত্র মাস বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা এমনই ধারণা দিলেন। কিন্তু আমাদের তো তর সহ্য হয় না। কাঁচা, পাকা যা–ই হোক, বাজারে এনে তুলতে পারলেই হলো। বিক্রি হবেই। আর পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এখন তরমুজের চাহিদাও বেশি। রোজাদাররা দুটি টাকা বেশি দিয়ে হলেও একটু ফল মুখে দিতে চান। এরপর আবার গরমও পড়তে শুরু করেছে। সব মিলে তরমুজের এখন বাম্পার চাহিদা।
এবার একজন চাষি, একজন আড়তদার, একজন খুচরা ব্যবসায়ীর কথা শোনা যাক। এদের কথা পড়লাম একটি নামী অনলাইনে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক মো. মিনহাজ। তিনি একটি ট্রাকে করে তাঁর খেতের চার হাজার তরমুজ নিয়ে এসেছেন।
মিনহাজ বলছিলেন, যাঁরা আগে আবাদ করেছিলেন, তাঁরা আগে তরমুজ তুলছেন।
তিনি স্বীকার করলেন, তরমুজ এখনো পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। তারপরও রমজানে যেহেতু চাহিদা থাকে, সে জন্য বাড়তি লাভের আশায় অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাঁর কথা, কয়েক দিন পর যেসব তরমুজ আসবে, সেগুলো পরিপক্ব হবে। কিন্তু তখন আর দাম পাওয়া যাবে না।
মিনহাজ নামে এই কৃষক তরমুজের আবাদ করেছিলেন ডিসেম্বরের শুরুতে। যখন ফুল আসছিল, তখন হঠাৎ কয়েক দিন বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টিতে তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার অনেকে নতুন করে আবাদ করে। ফলে খরচ বেড়ে যায়। তাঁর কথা, এ জন্য এবার তরমুজের দাম বেশি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে দাম কিছুটা কমতে পারে।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার ফাহাদ ফার্মের স্বত্বধিকারী মো. রফিকুল ইসলামের কথাও অনেকটা এ রকম, বাজারে সরবরাহ বাড়লে দামও কমে যাবে।
খুচরা বিক্রেতা ফয়সাল বলছিলেন, গত বছর এ সময় ১০০ তরমুজ ১২-১৩ হাজার টাকা করে আড়ত থেকে কিনতে পেরেছিলেন। আর এবার কিনতে হচ্ছে ২০-২৫ হাজার টাকায়। তাই খুচরায় ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তরমুজের বাজারে কোনো তদারকি নেই। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। ফলে এখন ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। সাধারণ বিচারে যা ৪০ টাকার ওপরে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
এবার সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন, তরমুজ কেন কেজি দরে বিক্রি হয়? তিন-চার বছর ধরে তরমুজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বেচাবিক্রির পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। বেশির ভাগ পণ্যই কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন পরে হয়তো এমন শোনা যাবে—ডাব,
কলা, বেলের মতো ফলও কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আমি কেজিতে তরমুজ বিক্রির বিপক্ষে নই। সমস্যা হলো, কোনো আইনে বা বিধিতে লেখা নেই তরমুজ কেজিতে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যিনি তরমুজ ফলাচ্ছেন, সেই কৃষক তো কেজিতে বিক্রি করছেন না। তিনি বিক্রি করছেন শ হিসাবে (১০০ পিস হিসাবে)। তবে তাঁকেও কেজিতে বিক্রির সুযোগ দেওয়া হোক। কেজিতে বিক্রির ফলে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের মতো ক্রেতারা।
রসাল এই ফলটি কার না পছন্দ! মহল্লার ফলের দোকানে এখনকার মৌসুমি ফল বরই, সফেদা, নানা পদের কলা, স্ট্রবেরি, পেয়ারা কমবেশি আছে লক্ষ করলাম। তবে তরমুজ আছে অপেক্ষাকৃত বড় দোকানগুলোতে। কারণ জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, মোকামে তরমুজের দাম বেশি।
তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ট্যাঁকে তরমুজ কেনার মতো পুজি নেই। যাঁরা একটু বড় ব্যবসায়ী, তাঁরাই দোকানে তরমুজ তুলতে পারছেন। তরমুজের এক দাম। কোনো নড়চড় নেই। কেজি হিসাবে নিলে ৮০ টাকা। অবশ্য পিস হিসাবেও যে বিক্রি হচ্ছে না তা একেবারে বলা যাবে না, কেউ কেউ বিক্রি করছেন।
তরমুজের দাম নিয়ে বিস্তারিত আলাপের আগে বলে নিই, কোনো ফলের দামই কম নয়। সম্প্রতি মাননীয় এক মন্ত্রী ইফতারের প্লেটে দেশি ফল বরই রাখতে বলেছেন, সে বস্তুটির কেজিও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। পেয়ারাও কাছাকাছি দাম। সরু সরু সাগর কলা প্রতি ডজন ১২০ টাকা কমপক্ষে। স্ট্রবেরি সাড়ে ৩০০। হালি ৪০ টাকার নিচে কোনো লেবু নেই, কদিন আগেও যা ছিল ২০ টাকা। শসা-খিরা ১০০, পাকা পেঁপে ২০০ টাকা কেজি। এ লেখায় আপেল, আনার, কমলা, আঙুরের কথা নাই–বাআনলাম।
যাঁরা মনে করছেন, এ তো ঢাকার দাম। গ্রামের মানুষেরা নিশ্চয়ই সুখে আছেন! কম দামে পাচ্ছেন। এমন ধারণা একদম ভুল। গ্রামে-মফস্সলেও দাম কমবেশি সমান। কিছু কিছু ফলের দাম বরং গ্রামে আরও বেশি। কুষ্টিয়া থেকে প্রথম আলোর রিপোর্টার তৌহিদী হাসান জানান, সেখানে আজ মঙ্গলবার প্রতি কেজি শসার দাম ১০০ টাকা। লেবুর দাম জিজ্ঞাসা করতেই ভয় পাচ্ছেন তিনি! বাগেরহাটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আহাদ হায়দার ফেসবুকে লিখেছেন, পাকা পেঁপের কেজি সেখানে ১৮০ টাকা।এবার তরমুজের প্রসঙ্গে আসা যাক। তরমুজ আমাদের দেশি ফল। এই মাটিতেই জন্মে। বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চল-পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠিতে প্রচুর হয়। সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার কয়রাসহ দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের ভালো ফলন হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও তরমুজের আবাদ হচ্ছে।
তরমুজ কৃষকেরা উৎপাদন করেন। এরপর পাইকারেরা তা কিনে প্রধানত ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বাজারে মোকামে নিয়ে তোলেন। কখনো কখনো বড় কৃষকেরা সরাসরি ট্রাক ভাড়া করে ফল শহরে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে খুচো ব্যবসায়ীরা কিনে আনেন। তাঁদের কাছ থেকেই
তরমুজ কেনেন সাধারণ ক্রেতারা।
সাধারণত ডিসেম্বর মাসে তরমুজের আবাদ করা হয়। ফল উঠতে উঠতে এপ্রিল।
এরপর মে মাসজুড়ে মাঠে তরমুজ থাকে। তাই পরিপক্ক তরমুজ উঠতে উঠতে চৈত্র মাস বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা এমনই ধারণা দিলেন। কিন্তু আমাদের তো তর সহ্য হয় না। কাঁচা, পাকা যা–ই হোক, বাজারে এনে তুলতে পারলেই হলো। বিক্রি হবেই। আর পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এখন তরমুজের চাহিদাও বেশি। রোজাদাররা দুটি টাকা বেশি দিয়ে হলেও একটু ফল মুখে দিতে চান। এরপর আবার গরমও পড়তে শুরু করেছে। সব মিলে তরমুজের এখন বাম্পার চাহিদা।
এবার একজন চাষি, একজন আড়তদার, একজন খুচরা ব্যবসায়ীর কথা শোনা যাক। এদের কথা পড়লাম একটি নামী অনলাইনে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক মো. মিনহাজ। তিনি একটি ট্রাকে করে তাঁর খেতের চার হাজার তরমুজ নিয়ে এসেছেন।
মিনহাজ বলছিলেন, যাঁরা আগে আবাদ করেছিলেন, তাঁরা আগে তরমুজ তুলছেন।
তিনি স্বীকার করলেন, তরমুজ এখনো পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। তারপরও রমজানে যেহেতু চাহিদা থাকে, সে জন্য বাড়তি লাভের আশায় অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাঁর কথা, কয়েক দিন পর যেসব তরমুজ আসবে, সেগুলো পরিপক্ব হবে। কিন্তু তখন আর দাম পাওয়া যাবে না।
মিনহাজ নামে এই কৃষক তরমুজের আবাদ করেছিলেন ডিসেম্বরের শুরুতে। যখন ফুল আসছিল, তখন হঠাৎ কয়েক দিন বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টিতে তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার অনেকে নতুন করে আবাদ করে। ফলে খরচ বেড়ে যায়। তাঁর কথা, এ জন্য এবার তরমুজের দাম বেশি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে দাম কিছুটা কমতে পারে।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার ফাহাদ ফার্মের স্বত্বধিকারী মো. রফিকুল ইসলামের কথাও অনেকটা এ রকম, বাজারে সরবরাহ বাড়লে দামও কমে যাবে।
খুচরা বিক্রেতা ফয়সাল বলছিলেন, গত বছর এ সময় ১০০ তরমুজ ১২-১৩ হাজার টাকা করে আড়ত থেকে কিনতে পেরেছিলেন। আর এবার কিনতে হচ্ছে ২০-২৫ হাজার টাকায়। তাই খুচরায় ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তরমুজের বাজারে কোনো তদারকি নেই। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। ফলে এখন ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। সাধারণ বিচারে যা ৪০ টাকার ওপরে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
এবার সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন, তরমুজ কেন কেজি দরে বিক্রি হয়? তিন-চার বছর ধরে তরমুজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বেচাবিক্রির পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। বেশির ভাগ পণ্যই কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন পরে হয়তো এমন শোনা যাবে—ডাব,
কলা, বেলের মতো ফলও কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আমি কেজিতে তরমুজ বিক্রির বিপক্ষে নই। সমস্যা হলো, কোনো আইনে বা বিধিতে লেখা নেই তরমুজ কেজিতে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যিনি তরমুজ ফলাচ্ছেন, সেই কৃষক তো কেজিতে বিক্রি করছেন না। তিনি বিক্রি করছেন শ হিসাবে (১০০ পিস হিসাবে)। তবে তাঁকেও কেজিতে বিক্রির সুযোগ দেওয়া হোক। কেজিতে বিক্রির ফলে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের মতো ক্রেতারা।