বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে শক্তিশালী কুয়েতকে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল করতে দেয়নি বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে গোল পায়নি নিজেরাও।
দারুণ কিছু সেভ করে দলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। ফলে ০-০ সমতায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়িয়েছে খেলা।
এর আগে দুইবার সাফের সেমিতে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। একবার জিতেছে,হেরেছে একবার।
কুয়েতের বৃষ্টির মতো আক্রমণ ঠেকিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে গেলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দাঁতে দাঁত চেপে কুয়েতি আক্রমণ ঠেকিয়েছেন।
তবে এই কৃতিত্বে বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোই পাবেন লেটার নম্বর। এক সময় কুয়েতের ফরোয়ার্ডদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জিকো। একের পর এক বল ঠেকিয়েছেন বুক চিতিয়ে। তার বীরত্বেই ম্যাচটি গোলশূন্যভাবে শেষ হলে গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
শনিবার ভারতের বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শুরুতে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশকে পুড়তে হয়েছে আফসোসে। না হলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারতো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এমনকি ম্যাচের প্রথম ৯০ মিনিটে অন্যরকম দৃশ্যও দেখা যেতো।
ধারেভারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে কুয়েত। তারপরও বাংলাদেশ মাঠে তার প্রভাব সেভাবে পড়তে দেয়নি। বাংলাদেশ কেবল কুয়েতের আক্রমণ সামলায়নি, আক্রমণেও গেছে কয়েবার। তবে প্রথমার্ধে কোনো দল গোল না পাওয়ায় প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে ০-০ ভাবে। স্কোর অপরিবর্তিত ছিল দ্বিতীয়ার্ধেও।
দ্বিতীয় মিনিটেই ম্যাচের সহজতম সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। এই সাফের আলোচিত তরুণ ফুটবলার মোরসালিন সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে এগিয়ে থেকেই বিরতি যেতে পারতো ক্যাবরেরার শিষ্যরা।
ডান দিক দিয়ে একক প্রচেষ্টায় কুয়েতের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন রাকিব। বল ঠেলে দিয়েছিলেন বক্সে দাঁড়ানো মোরসালিনকে। বল যখন মোরসালিনের পায়ে তখন তার সামনে শুধুই কুয়েতের গোলরক্ষক মারজুক।
তরুণ এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বল গোলরক্ষকের গায়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। ফিরে আসা বলে দুইবার চেষ্টা করেও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি মোরসালিন। শুরুতে বড় বিপদ থেকে বেঁচে যায় ১৯৮২’র বিশ্বকাপ খেলা দেশটি।
ষষ্ঠ মিনিটে বাংলাদেশ গোলমুখে তৈরি হওয়া জটলায় বিপদের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। গোললাইন থেকে এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশের নিজেদের কৌশলে খেলে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে কুয়েতকে। যদিও বল দখলে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এমনকি পোস্টে শট নেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা এগিয়েছিল বাংলাদেশের চেয়ে।
২৯ মিনিটে একটি থ্রো থেকে বক্সের মাথায় বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শট করেছিলেন আল রাশিদি। আনিসুর রহমান জিকো লাফিয়ে এক হাতে বলটি ঠেকিয়ে বাঁচিয়ে দেন দলকে। এর পরপরইন এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাম দিক থেকে রাকিবের উদ্দেশ্যে মাপা ক্রস ফেলেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। রাকিব বলের পজিশনে থাকলে মাথা লাগাতে পারেননি।
৫৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রাকিবের নেওয়া শট বাইরে চলে যায় ক্রসবারে বাতাস দিয়ে। ৬১ মিনিটে আবারো রাকিবের সামনে সুযোগ এসেছিল। ডান দিক দিয়ে ঢুকে তিনি যে শট নিয়েছিলেন তা ক্রসবাের ছুঁয়ে চলে যায় বাইরে।
৬৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ফ্রিকিকে প্রায় গোল করে ফেলেছিল কুয়েত। কিন্তু আনিসুর রহমান জিকো দুর্দান্ত দক্ষতায় ফিস্ট করে দলকে আরেকবার বাঁচান। ৭০ মিনিটে দলকে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে রক্ষা করেন জিকো। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এক পেয়েছিলেন জিকোকে। কিন্তু আবদুল্লার নেওয়া শট আটকে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক।
শেষ দিকে কুয়েতের ফরোয়ার্ডদের বারবার হতাশ করেন আনিসুর রহমান জিকো। ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসে খেলা জিকো বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা এখন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ একাদশ
আনিসুর রহমান জিকো (গোলরক্ষক), তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, শেখ মোরসালিন (মোহাম্মদ ইব্রাহিম), মো. হৃদয়, জামাল ভূঁইয়া (ফয়সাল আহমেদ ফাহিম), সোহেল রানা, ইশা ফয়সাল, সোহেল রানা-২ ও রাকিব হোসেন।