নওগাঁয় কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে সবজির দাম। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। বিভিন্ন বাজারে পাইকারিতে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকাতে। তবে স্থানভেদে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায়।
জেলা শহরের সবজির পাইকারি বাজার চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। যেখান থেকে সবকিছু সর্বনিম্ন পাঁচ কেজি কিনতে হয়। তাই এখানে দাম কিছুটা কম হলেও সবার পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই খুচরা বাজার থেকেই সব নিতে হয় ক্রেতাদের।
রোববার (৯ জুলাই) সকালে নওগাঁ পাইকারি সবজি বাজার ঘুরে জানা যায়- দেশি কাঁচা মরিচ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। যা শনিবার বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। বগুড়া চাড়ানি বা দিনাজপুরের মরিচ ১৮০ টাকা কেজি। যা আগেরদিন বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে।
আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি দেশি আলু ৪৮-৫০ টাকা এবং হলেন্ডার ৩৫-৩৬ টাকা কেজি। বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লাল বেগুন ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ২৫-২৬ টাকা, চিচিঙ্গা ২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৩৫ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, পটল ২৪ টাকা এবং শসা ৪০ টাকা কেজি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে করলা ৮০-৯০ টাকা কেজি। এছাড়া প্রতিপিস লাউ ও ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৬৬ টাকা কেজি, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকা, রসুন ১৫০-১৭০ টাকা এবং আদা ২৫০ টাকা কেজি।
পাইকারি বাজারে বিক্রি হওয়া সব ধরনের সবজি হাত বদলে খুচরা বাজারে বিক্রি হয় প্রায় এক থেকে দেড়গুণ বেশি দামে। মরিচসহ সবজির দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সবজি বাজারে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
রাস্তার পশ্চিম পাশের প্রায় ৩০০ ফুট দূরে খুচরা সবজি বাজার। পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা সামান্য লাভে বিক্রি করেন। তবে বৃষ্টিতে বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে দাম।
সেখানে প্রতিকেজি পটল ৩০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০ টাকা, দেশি শসা ৭০ টাকা ও হাইব্রিড ৫০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, সাদা বেগুন ৮০ টাকা ও লাল বেগুন ৬০ টাকা, কাকরুল ৫০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা এবং কাজর ৪০ টাকা। প্রতিপিস ফুলকপি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- খরা ও অনাবৃষ্টিতে মরিচসহ অন্যান্য শাক সবজির গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। গাছে ফুল আসলেও ঝরে পড়েছে। তবে ১৫ দিন ধরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। নতুন করে আবার গাছ হচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ায় এখন সবজিক্ষেত সবুজ হয়েছে। উৎপাদন বেশি হলে দাম কমে যাবে।
শহরের পার-নওগাঁ মহল্লা তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি দোকানেই কাঁচা মরিচ আছে। অথচ দাম বেশি। ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচের প্রয়োজন ছিল। দাম বেশি হওয়ায় ৪০ টাকায় ১০০ গ্রাম মরিচ কিনেছি। এছাড়া অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। মরিচের দামে আমরা অস্বস্তির মধ্যে পড়েছি।
পৌর পাইকারি বাজারে মরিচ ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন বলেন, প্রকারভেদে দেশি ২৫০-২৮০ টাকা এবং দিনাজপুরের মরিচ ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার দাম কিছুটা বেশি ছিল। আজ বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে।
পৌরবাজার খুচরা সবজি ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন- দেশি কাঁচা মরিচ ২৮০ টাকা কেনা হয়েছে। যেখানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। অনেকে কৌশলে বেশি দামেও বিক্রি করছে। এছাড়া বৃষ্টিতে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। একারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।
নওগাঁ কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী বলেন, খরার কারণে মরিচের গাছ মারা গেছে। বৃষ্টি হওয়ায় আবার নতুন করে গাছ হচ্ছে। যেসব গাছ বেঁচে আছে তাতে মরিচ হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় তুলনায় কম। পাইকারি বাজরে ১৮০-২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে খুচরায় বেশি দামে বিক্রি করে। যা ওই ব্যবসায়ীর কারসাজি। ক্রেতা দেখেশুনে না কিনলে ঠকবেন। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে সামান্য লাভে তারা বিক্রি করে। এছাড়া আমদানি করা মরিচ আমাদের জেলা আসছে না। এরই মধ্যে কিছু সবজির দাম কমেছে এবং বেড়েছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এক হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হবে দুই হাজার ৯০ মেট্রিকটন। এরই মধ্যে ৭০০ হেক্টর উৎপাদন হয়ে গেছে। এখন প্রায় ৩৩৫ হেক্টর আবাদ আছে। যা থেকে মরিচ উৎপাদন হচ্ছে।