মৃৎশিল্প; মানুষের প্রারম্ভিক শিল্পকলার অন্যতম। বাংলাদেশের লোকজ কারুকাজে মৃৎশিল্পীদের অবদান অনেক। মূলতঃ মৃৎশিল্পের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের মাধ্যমে আবহমান বাংলার লোকশিল্পের বিকাশ ঘটে।
কুমিল্লা জেলার ব্র্যান্ডিং হচ্ছে- ‘ঐতিহ্যে-গৌরবে কুমিল্লা’। এর পেছনে প্রধানতম যে কারনটি রয়েছে তা হলো- কুমিল্লা হচ্ছে অত্যন্ত গৌরবময় ও প্রশংসনীয় শিল্পকলার ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।
বিশেষ করে কুমিল্লার মৃৎশিল্পের ইতিহাস যে অনেক প্রাচীণ তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। লালমাই ময়নামতি এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে প্রাপ্ত কালোত্তীর্ণ শিল্পকর্ম পোড়া মাটির ফলক গুলোই বলে দেয়, কুমিল্লার মৃৎশিল্পের সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ পোড়া মাটির ফলক কুমিল্লা জেলার মৃৎশিল্পীদের অসামান্য নৈপুণ্যের স্বাক্ষর বহন করছে। তাছাড়া প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে খননকালে লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলে অনেক মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। কুমিল্লার ময়নামতি বিহারে ঐতিহ্যমন্ডিত, সুপ্রাচীন মৃৎশিল্পের ও পোড়ামাটির কর্মের উৎকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে। কুমিল্লার মৃৎশিল্পের ও পোড়ামাটির কাজ যে একসময় চরম উৎকর্ষ ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল তা বিভিন্ন বিহার, স্তূপ, ফলকে উৎকীর্ণ প্রতিকৃতি চিত্র, মূর্তিখোদিত চিত্র এবং বিভিন্ন চিত্রিত হাঁড়ি-পাতিল, কলস ইত্যাদি থেকে সহজেই অনুমান করা যায়।
একদা কুমিল্লার প্রায় প্রতিটি উজেলাতেই মৃৎশিল্প ছিলো। সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে গুটিকয়েকটি স্থানে এই শিল্পটি টিকে থাকলেও আশার কথা হচ্ছে শতপ্রতিকুলাতার মাঝেও সগৌরবে মাথা উঁচু করে টিকে আছে এবং বিশ্বময় নিজেদের সুনাম ছড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লার মাথাকে উচু করেছে একটি প্রতিষ্ঠান- বিজয়পুর মৃৎশিল্প।
বলছি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মৃৎশিল্পের কথা। দীর্ঘ সময় ধরে এ গ্রামের মৃৎশিল্পীরা মাটির তৈজসপত্রসহ নানান সাগ্রী তৈরি ও বাজারজাতের মাধ্যমে নিজেরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি, তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় উৎপাদিত মাটির সামগ্রী বিদেশে রপ্তানী করে দেশে বয়ে আনছেন বৈদেশিক মূদ্রাও।
কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সমতল ভূমির সাতটি গ্রাম। ওই গ্রামগুলোয় পাল বংশের অধিবাসীরা বংশপরম্পরায় মাটির জিনিসপত্র তৈরির কাজটা পরম মমতায় করে যাচ্ছেন। অনন্য বৈশিষ্ট্য ও নকশার কারণে এখানকার মাটির সামগ্রীগুলোর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
প্লাস্টিকের সহজলভ্যতার কারণে মাটির জিনিসের প্রতি তেমন আর আগ্রহ নেই অনেকেরই। তবে, কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পীদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন ‘রুদ্রপাল সমবায় সমিতি’ নানাবিধ সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও কুমিল্লা তথা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ ধরে রেখেছে, তাদের নান্দনিক কারুকাজে তৈরি মাটির সামগ্রী। তাদের তৈরী শো-পিস সামগ্রী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ষাটের দশকে এ দেশের সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. আখতার হামিদ খানের অনুপ্রেরণা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠে- বিজয়পুর রুদ্রপাল সমবায় সমিতি। ১৯৬১ সালে বিজয়পুর গ্রামের ‘প্রগতি যুব সংগঠন’টিকে রূপান্তর করেই ‘বিজয়পুর রুদ্রপাল সমবায় সমিতি লিমিটেড’ গঠন করা হয়।
প্রায় ৮২ শতক নিজস্ব সম্পত্তির উপর অবস্থিত এইমৃৎশিল্প কার কারখানা। এখানে শুধু উৎপাদনই হয় না, উৎপাদনকেন্দ্রে সমিতির সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মৃৎশিল্পের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মৃৎশিল্পী সৃষ্টি করে যাচ্ছে এখানে।
সমিতির নিজস্ব কারখানায় বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী তৈরী করছেন- করা হচ্ছে হাঁড়ি, পাতিল, বাটি, বদনা, মটকা, প্রদীপ, ছাইদানি, গ্লাস, সানকি, ঘড়া, কল্কি, গামলা, জলাবিড়া, জটধুসি, জলকান্দা, চুনপাত্র, সরাই, দুধের হাঁড়ি, ফুলদানি, মালসা, থালা, পানের বাটা, সন্ন্যাসীর গাড়–, খেলনা, কলস, মুবঘট, লক্ষ্মীঘট, আয়োঘট, পুজারঘট, দোয়াত বৈয়াম, দুধ সানার পত্র, লক্ষ্মীসরা, মটকা, কাজলবাটি নাদা, তবলার বায়া, মৃদংগ নাল, পাখোয়াজের মাটির খোল, দইছোবাসহ অসংখ্য রকমের দৃষ্টিনন্দন জিনিসপত্র। এছাড়াও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পীদের তৈরি নান্দনিক ও রুচিসম্পন্ন পোর্ট্রেট ঘর সাজানোর আধুনিক ধারার কারুকার্যখচিত সরঞ্জামাদি বিপুল সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া এগুলো ইউরোপ ও আমেরিকায়ও রফতানি হচ্ছে।
রফতানিযোগ্য মৃৎশিল্পসামগ্রী যেমন ঘর সাজানো দ্রব্যাদি, বিভিন্ন প্রকার ফুলদানি, বিভিন্ন প্রকার মডেল, মনীষীদের প্রতিকৃতি, ওয়াল প্লেট, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মডেল, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মডেল, জীবজন্তুর মডেল, বিভিন্ন প্রকারের ক্রেস্ট, গারলিক পট, খাবারের প্লেট, বল-বাটি, মগ-জগ, টব ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিদের প্রতিকৃতি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিজয়পুরের মৃৎশিল্প : তৈরি করা মাটির মণ্ড যন্ত্রের ছাঁচে কিংবা হাতের নিখুঁত নকশায় রূপান্তরিত হতে থাকে দৃষ্টিনন্দন মাটির শিল্পকর্মে। মাটির শৈল্পিক পণ্য তৈরির এই জায়গাটি হচ্ছে কুমিল্লার বিজয়পুর। শুকানো মৃৎপণ্য আগুনে পুড়ে পোড়ামাটির রূপ নেয়। কতগুলোতে আবার ওঠে চকচকে রংতুলির আঁচড়, দেখে মনেই হয় না যে মাটির তৈরি! এসব পণ্য সব থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়। দেশ তো বটেই, দেশের বাইরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানে যাচ্ছে মাটির তৈরি এসব পণ্য।
যেভাবে শুরু: ১৯৬০ সালে ব্রাহ্মণদের হাত দিয়ে কুমিল্লায় প্রথম গড়ে ওঠে ‘প্রগতি যুব সংগঠন, ঠাকুরপাড়া নামে এক সমবায় সমিতি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান শিল্পভিত্তিক সমবায় সমিতি গড়ার প্রতি জোর দেন। এর ফলে ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল কুমার ও পালদের সাতটি গ্রাম—উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর, নোয়াপাড়া, গাঙকুল, টেগুরিয়াপাড়া, দুর্গাপুর ও বরোপাড়া নিয়ে গঠিত ‘প্রগতি যুব সংগঠন’ নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বিজয়পুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি’ হিসেবে। প্রতিষ্ঠালগ্নে এর সদস্যসংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ জন। আমানত হিসেবে জনপ্রতি আট আনা করে মোট ৭ টাকা ৫০ পয়সা জমা করেন। শেয়ারে জনপ্রতি ১০ টাকা করে মোট ১৫০ টাকা ওঠে। মোট ১৫৭ টাকা ৫০ পয়সা মূলধন দিয়ে বিজয়পুর মৃৎশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। সমিতির সদস্যসংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৯ জনে। তাঁদের মধ্যে ১৪২ জন পুরুষ ও ৬৭ জন নারী সদস্য। ১৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে শুরু করে সমিতির মূলধন এখন দাঁড়িয়েছে সাত-আট কোটি টাকায়।
১৯৬৪-তে ঢাকার একটি সংস্থা আরআইএস (রুরাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি) প্রথম তাঁদের ১২ হাজার টাকা ঋণ ও একটি কয়লার চুলা দেয়। তাতে উত্পাদন এগিয়ে চলল পুরোদমে।
বিজয়পুর মৃৎশিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান: ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী সব পুড়িয়ে দেয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ইংল্যান্ড ও ভারত হয়ে দেশে ফিরে কুমিল্লায় আসেন। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে কুমিল্লার অভয়াশ্রমে তখন বিশাল এক জনসভার আয়োজন করা হয়। সেই সময়ে ‘ইন্দিরা-মুজিব’একটি যৌথ ক্যালেন্ডার ছিল প্রায় সর্বত্র। তখন সেই ক্যালেন্ডার দেখে বিজয়পুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সদস্যরা একটি ত্রিমাত্রিক মডেল বানালেন প্লাস্টার দিয়ে। তা ওই জনসভায় সমিতির পক্ষ থেকে সম্মাননা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দেন ও স্থানীয় প্রশাসনকে বললেন সহযোগিতা করতে। স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় কাঠ, সিমেন্ট আর টিনের ব্যবস্থা করে দিল। আর অবকাঠামোগত কাজে এগিয়ে এসেছিলেন প্রকৌশলী আতাউর রহমান। ফলে ওই ৭৫ হাজার টাকা আর সরঞ্জামাদি দিয়ে একটি ঘর তুলে সমিতির শিল্প চালানোর মতো একটা পরিবেশের সৃষ্টি হলো তখন।
ক্রমে উন্নতি: ১৯৭৫ সাল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন রাষ্ট্রপতি। জুন-জুলাইয়ের দিকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ তহবিল থেকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাকে (বিসিক) সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়, এখানে বৈদ্যুতিক চুলা বসানোর জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সেই চুলা আর বসানো হলো না। বিসিক সেই বৈদ্যুতিক চুলা বসাল ১৯৮২ সালে। কিন্তু কয়েলে ত্রুটি ছিল বলে সেই চুলা কাজে এল না। পরে ১৯৯১ সালে বিসিক আরেকটি চুলা বসায় ফার্নেস অয়েলের, যা এখনো বর্তমান।
বর্তমানে বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি প্রায় সহস্রের ওপর ক্রোকারিজসহ শো-পিস সামগ্রী রফতানি করছে ইউরোপ ও জাপানে। বিজয়পুর গ্রামের মৃৎশিল্পীরা গড়ে তুলেছে মাটির ক্রোকারিজসহ শো-পিসের দৃষ্টিনন্দন সাম্রাজ্য। মৃৎশিল্পীদের মেধা আর শ্রমে তৈরি মাটির ক্রোকারিজসহ শো-পিস আজ রফতানি পণ্যের তালিকায়। কাদামাটিকে পুঁজি করে নিজেদের বংশ পরম্পরার এই শিল্পকে সগৌরবে টিকিয়ে রেখেছেন তারা। স্বল্প পুঁজিতে কারখানা প্রতিষ্ঠা করে অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী বিধবা স্বামী পরিত্যক্তা অনেক শ্রেণির নারীরাও এ কাজে শামিল হচ্ছেন। খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের বেঁচে থাকার স্বাচ্ছন্দ্য।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অবদান: জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৪ সালে সাড়ে আট কিলোমিটার দূর থেকে গ্যাস-সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর থেকে উত্পাদিত পণ্য নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে। ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ থেকে কমে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে পণ্য নষ্ট হওয়ার হার। আর বার্ষিক নিট লাভের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় আট থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা। সেই টাকা দিয়ে তখন ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ জায়গাও কেনা হলো এই শিল্পের জন্য। উত্পাদন বাড়াতে ১৯৯৭-৯৮ সালে সমিতির সদস্যরা ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কয়লার চুল্লি কেনেন। ২০১০ সালে বিজয়পুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি সমবায় অধিদপ্তর প্রকল্পের নজরে আসে। সেই প্রকল্পের সুবাদে সমিতি পেল সাড়ে ২২ লাখ টাকা মূল্যের আরও একটি বড় চুলা।
এই প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের মৃৎশিল্প পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রফতানিকারকদের মাধ্যমে জাপান, কানাডা, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হতো, যা বর্তমানে গ্যাস-সংকটে বন্ধ রয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিজয়পুর মৃৎশিল্পটি ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুদান ও সার্বিক সহযোগিতায় পুনর্জন্ম হয়। এই সমিতি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এলাকায় বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। এই মৃৎশিল্পকেন্দ্রে কাজ শিখে এলাকার প্রায় ৫০ জন মৃৎশিল্পীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
রুদ্রপাল সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, শুরুতে আমরা কাঠ, পরবর্তীতে কয়লা, এরপর কারেন্টে পোড়ানোর কাজ করি। ১৯৯২ সাল থেকে গ্যাসের মাধ্যমে আমাদের পণ্য পোড়ানো শুরু হয়। ১৯৯২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় প্রচুর বিদেশি অর্ডার পেয়েছি। মাসে ২০ লক্ষাধিক টাকা পণ্য বিদেশে রফতানি করতে পেরেছি। গ্যাস-সংকটের কারণে পাঁচ-ছয় বছর ধরে কোনো অর্ডার পাচ্ছি না।
সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে বরেণ্য ব্যক্তিরা আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে করতে আসেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল, ইংল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাসহ বিদেশি ব্যক্তিবর্গ এখানে বেড়াতে বা সফরে এসে এখানকার উৎপাদিত পণ্য দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন।
বিজয়পুর মৃৎশিল্পে উৎপাদন প্রক্রিয় : মৃৎশিল্পের জন্য যে কাদামাটি ব্যবহার করা হয় তা আলাদা ধরনের। নদীর অববাহিকাতেই এই মাটি পাওয়া যাওয়া। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গাতে কয়েক ফুট মাটি খনন করলে এই মাটির সন্ধান মেলে। তবে প্রথম খননের স্তরের মাটি কালচে হলেও যত গভীরে যাওয়া যায় মাটির রং পীত ও ধূসর বর্ণের হয়। প্রথমত, মাটি সংগ্রহের জন্য কোদাল, খন্তা ও শাবলের প্রয়োজন হয়। মাটি সংগ্রহ করে মাটি খোলায় চার থেকে পাঁচ মাস মাটি সংগ্রহ করে রাখা হয়। এই পদ্ধতিকে ‘জাগ’ বলে। জাগ দেওয়া মাটিকে পা দিয়ে মাড়িয়ে নরম করে নেওয়া হয় যাকে মৃৎশিল্পের ভাষায় ‘ছানা’ বলা হয়। মাটি অল্প অল্প করে ছেনার মাধ্যমে অথবা সব মাটি একসঙ্গে করে কোদালের সাহায্যে চাক করে বড় ‘চাপ’ বানানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাটিচাপা আর বৃহৎ আকৃতির মাটির এই স্তূপকে বলা হয় ‘চাপ’।