ভোলার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার কুকরি–মুকরি, ঢালচর, মুজিবনগর ইউনিয়নসহ ৭৪টি চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে ভোগান্তি বেড়েছে লোকজনের। এদিকে ভোলার সব নৌ রুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর, ভোলার চর, কানিবগার চর, চর মোহাম্মদ; চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর ইউনিয়ন; লালমোহন উপজেলার চর কচুয়া, চর শাহাজালাল; তজুমদ্দিন উপজেলার চর মোজাম্মেল, চর জহিরুদ্দিন; বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরসহ ৭৪টি দুর্গম চরাঞ্চলে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার কুকরি–মুকরি ইউনিয়নের চর পাতিলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-আমিন মাতব্বর বলেন, শনিবার রাত থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। রাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। রোববার সকাল ৯টা থেকে জোয়ার আসা শুরু করে। বেলা ১১টা থেকে আরও বেশি গতিবেগে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত থাকা ঝড়, বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে চর পাতিলার সব ঘরে পানি ওঠে। প্রায় বুকসমান পানি উঠে চর পাতিলার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও মসজিদ ডুবে যায়।
কুকরি–মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, চর পাতিলার চারদিকে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চরে বুকসমান পানি উঠেছে, এতে চরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বন্দী হয়ে পড়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত চরের মানুষের সঙ্গে স্পিডবোট চালিয়ে দেখা করতে গেছেন।
ঢালচরের বাসিন্দা মো. শাহ আলম ফরাজী বলেন, বেলা ১১টার দিকে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়। ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে ঢালচরের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ঢালচর ইউনিয়নের ঢালচর ও চর নিজামের প্রায় পাঁচটি বাড়িতে পানি উঠেছে। আর ঝোড়ো হাওয়ায় অনেকগুলো ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, ঝড় থামলে তালিকা করা হবে। দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের সদস্য ফারুক দৌলত বলেন, চরে ১০টি বাথানে প্রায় ১০ হাজার মহিষ রয়েছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারে আরও ২৫ হাজার গবাদিপশু আছে। গবাদিপশুর মালিক ও বাথানিদের মুজিব কিল্লাসহ বিভিন্ন নিরাপদ আশ্রয়ে গবাদিপশু নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঘরবাড়িতে থাকা মানুষজনকে ইউনিয়নের সাইক্লোন শেল্টারে আসতে বলা হয়েছে। শেল্টারগুলো শনিবার রাত থেকে লোক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলকে ৯ ও ১০ এবং ভোলার নদীগুলোকে ৪ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে। ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকার নির্দেশে ভোলার সব নৌপথে লঞ্চ, ফেরি, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ খান বলেন, শনিবার রাত থেকেই তাঁরা ভোলার ইলিশা-লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট নৌপথে এবং ভোলার ভেদুরিয়া-বরিশালের লাহারহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তবে খুব বেশিসংখ্যক গাড়ি আটকে নেই। সব মিলিয়ে ২ ঘাটে ৫০টির মতো গাড়ি অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভোলা নদীবন্দর সূত্র আরও জানায়, শনিবার রাত থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাতাসের গতি ও নদীর ঢেউ বেড়ে যায়। এর ফলে ভোলা-ঢাকা, ইলিশা-ঢাকা, ভোলা-বরিশাল, চরফ্যাশন-ঢাকা, লালমোহন-ঢাকা, বোরহান উদ্দিন-ঢাকা, হাতিয়া-মনপুরা-ঢাকা, ভোলার ইলিশা-বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জসহ একাধিক নৌপথে লঞ্চ, ফেরি, সি-ট্রাক, স্পিডবোট ও যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, শনিবার রাতে তাঁরা জরুরি সভা করেছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে তাঁরা বিভিন্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল থেকে অনিরাপদ মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।