সড়ক ও সেতুর টোল বাড়াতে ২০১৪ সালের নীতিমালা সংশোধন করছে সরকার। প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। শুধু বিদ্যমান সেতু ও সড়কে টোল বৃদ্ধি নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে টোল আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে। নীতিমালায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক এবং সেতুতে ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) ভিত্তিতে টোল নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে। মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত এ সূচক পরিবর্তনে বছর বছর বাড়তে পারে টোল।
বিদ্যমান নিয়মে জাতীয় মহাসড়কে ৭৫১ থেকে ১ হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর ভিত্তি টোল ৩০০ টাকা। অর্থাৎ সেতু পারে মাঝারি ট্রাকের ৩০০ টাকা লাগবে। অন্যান্য যানের টোল নির্ধারিত হয় মাঝারি ট্রাকের অনুপাতে। যেমন– ট্রেইলারের টোল মাঝারি ট্রাকের আড়াই গুণ বা ২৫০ শতাংশ, বাসের ৯০ শতাংশ। জাতীয় মহাসড়কে এমন দৈর্ঘ্যের সেতুতে ট্রেইলারে টোল ৭৫০ টাকা, বাসে ২৭০ টাকা। তবে কিছু সেতুতে নীতিমালার চেয়ে কম টোল নেয় সওজ। যেমন– নারায়ণগঞ্জের জাতীয় মহাসড়কে ১ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে মাঝারি ট্রাকের টোল ২৫০ টাকা। এ সেতুতে ট্রেইলারের টোল ৬২৫; বড় ট্রাকে ৫০০, বড় বাসে ২৫৫, প্রাইভেটকারে ৬৫ ও মোটরসাইকেলে ১৫ টাকা।
নীতিমালায় বদল এলে শীতলক্ষ্যা সেতুতে মাঝারি ট্রাকে ৩৪৫, ট্রেইলারে ৮৬৫, বড় ট্রাকে ৬৯০, বাসে ৩১০, মাইক্রোবাসে ১৪০, প্রাইভেটকারে ৯০ ও মোটরসাইকেলে ২০ টাকা টোল দিতে হবে।
গত ২৬ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে নতুন টোল নীতিমালার খসড়া চূড়ান্তে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। কিছু সংশোধনী প্রস্তাব থাকলেও টোল বৃদ্ধিতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সড়ক পরিবহন সচিব সমকালকে বলেছেন, প্রস্তাবিত নীতিমালা শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।
নীতিমালায় এক্সপ্রেসওয়েতে ৭৫১ থেকে ১ হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর ভিত্তি টোল ৪০০, জাতীয় মহাসড়কে ৩০০, আঞ্চলিক ও সীমান্ত মহাসড়কে ২০০ এবং জেলা সড়কে ১০০ টাকা। এক হাজার মিটারের বেশি দৈর্ঘ্য সেতুর ভিত্তি টোল এর ১২৫ শতাংশ বা ৩৭৫ টাকা। ৫০১ থেকে ৭৫০ মিটারের সেতুর ভিত্তি টোল ২২৫ টাকা। ২০১ থেকে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর ভিত্তি টোল ১৫০ টাকা। সড়ক পরিবহন বিভাগের ‘ভিত্তি টোল, টোল হার সংশোধন ও যৌক্তিকীকরণ’ কমিটি বলছে, বৃদ্ধি নয়, সমন্বয় হচ্ছে টোল।
যানবাহন ১৩ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ‘গ’ শ্রেণি তথা মাঝারি ট্রাকের অনুপাতে অন্যান্য যানের টোল নির্ধারণ হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কের সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালার ৪(২.৩) ধারায় প্রস্তাব করা হয়েছে, টোলমুক্ত সেতুর স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ হলে তা থেকে টোল আদায়ের।
টোল নির্ধারণে নতুন সূত্র প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালায়। তা মেনে বর্তমান অর্থবছরের পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ভোক্তা মূল্যসূচক থেকে ২০১৪ সালের মূল্যসূচক বিয়োগ করা হবে। বিয়োগফলকে ভিত্তি অর্থবছরের মূল্যসূচক দিয়ে ভাগ করা হবে। প্রাপ্ত ফলাফলকে ভিত্তি টোল দিয়ে ভাগ করে, ভাগফলকে শূন্য দশমিক ৩ দিয়ে গুণ করা হবে। এর পর গুণফলের সঙ্গে যোগ হবে ২০১৪ সালের ভিত্তি টোল। খসড়া নীতিমালায় ২০২২ সালের মূল্যসূচক হিসাবে জাতীয় মহাসড়কের সেতুর ভিত্তি টোল হবে ৩৪৫ টাকা। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভিত্তি টোল ৪৫ টাকা বাড়বে। টোল বাড়লে ভাড়াও বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
খসড়ায় এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিলোমিটারের ভিত্তি টোল দুই টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ একটি মাঝারি ট্রাক এক্সপ্রেসওয়ের এক কিলোমিটার চললে দুই টাকা টোল দিতে হবে। সেতুর মতো সড়কেও অন্যান্য যানের টোল নির্ধারিত হবে ভিত্তি অনুপাতে। বাসে ১০০ কিলোমিটারে ১৮০ ও মোটরসাইকেলের লাগবে ১০ টাকা। জাতীয় মহাসড়কে টোল আগের মতো দেড় টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে এক টাকা ও জেলা সড়কে ৫০ পয়সা রাখার প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়। নতুন যোগ করা সীমান্ত সড়কে এক টাকা ভিত্তি টোলের প্রস্তাব রয়েছে।
জনগণের টাকায় নির্মিত সেতু ও সড়কে কেন টোল দিতে হবে– প্রশ্নে সচিব বলেছেন, ‘টোলের টাকায় সড়ক উপযোগী থাকবে, যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। মানুষ এখন টোলের টাকা নিয়ে চিন্তিত নন; তারা সেবা চান।’