দুর্নীতি-অর্থপাচারকে সুশাসন ও উন্নয়নের অন্তরায় বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। ঘুস লেনদেন, দুর্নীতি ও অর্থপাচার করে সোনার মানুষ গড়া যায় না, এমন মন্তব্য আদালতের।
হাইকোর্ট বলেছেন, যে কোনো মূল্যে দুর্নীতি-অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। এটি বাঞ্ছনীয় নয়।
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল ও প্রকাশ নিয়ে এক রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী একেএম ফজুলল হক.শুনানি শেষে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বিবরণীর ঘোষণা এবং সময়ে সময়ে দাখিলের বিধি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রুলও জারি করেছেন আদালত।শুনানিতে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বরাতে রিটকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেন, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ব্যাপক দুর্নীতি করছেন। বিভিন্ন সময় খবর-প্রতিবেদনে এসেছে তারা অর্থপাচার করেছেন এবং এ নিয়ে বিবাদীদের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। এর ফলে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।এ আইনজীবী আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা সরকারি কর্মচারীর মতো সরকারি কোষাগার থেকে কোনো বেতন পান না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ ১২(৩)(খ) অনুসারে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে সম্পদের বিবরণী এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় জনগণের করের টাকা থেকে।
‘পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) তথ্যমতে, রাজস্বের ৪৩ শতাংশ খরচ করা হয় তাদের বেতন-ভাতা বাবদ। সুতরাং তাদের সম্পদের বিবরণী জানার অধিকার জনগণের আছে। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ১৩(১) (২) বিধিমালা অনুসারে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় সম্পদের ঘোষণা এবং প্রতি পাঁচ বছর পর পর সম্পদ বিবরণী দেওয়ার বিধান আছে। দুর্নীতি ঠেকাতে এ বিধানের যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।’
সুবীর নন্দী দাস আরও বলেন, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানও গড়েছেন অঢেল সম্পদ। এই বেনজীর-মতিউরদের মত শীর্ষ পদধারীদের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তখন আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। এরকম ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলে তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন নাকি নিজেদের সম্পদ রক্ষা করবেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা রাষ্ট্র, জনগণ, সার্বভৌমত্বকে রক্ষা না করে নিজেদের সম্পদই রক্ষা করবেন।এসময় শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, দুর্নীতি-অর্থপাচার সুশাসন ও উন্নয়নের অন্তরায়। তাই যে কোনো মূল্যে দুর্নীতি-অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ গড়তে হবে।হাইকোর্ট আরও বলেন, ঘুস-দুর্নীতি-অর্থপাচার দিয়ে সোনার মানুষ গড়া যায় না। এর জন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। একে আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।তিনি বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরাই এখন প্রধান কাজ। তা করতে যা যা দরকার করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দেওয়ার বিধান আছে, সুতরাং তারা সম্পদ বিবরণী দিতে বাধ্য। কিন্তু বিধান বাস্তবায়নে যেন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অহেতুক নাজেহাল না হন, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।