ড্রেসিং রুমের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সোজা নেটের দিকে চলে গেলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন, নাঈম হাসানদের অপেক্ষায় রেখে নেটের মাঝে দাঁড়িয়েই রনি তালুকদারের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। এর আগে মিনহাজুল আবেদীন ও আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেল তাকে।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমে রোববার দুই নির্বাচকের সঙ্গে কোচের ওই লম্বা সময়ের ওই আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে অনেক কিছুই। তবে আফগান বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রসঙ্গ যে সেখানে ছিল, তা বলে দেওয়ায় হয়তো খুব বেশি ঝুঁকি নেই।
চলতি সিরিজের দুই ম্যাচ তো বটেই, আফগানদের বিপক্ষে বেশির ভাগ সময়ই ধুঁকতে দেখা যায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের আগে যা একপ্রকার অশনি সংকেতই বলা যায়।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৪২ রানে হারের পর রোববার অনুশীলন করেননি ওয়ানডে দলের ক্রিকেটাররা। বিশ্রামে কেটেছে তাদের সময়। দুপুরে টি-টোয়েন্টি দলের নাসুম, রিশাদ, শামীম হোসেনদের সঙ্গে মাঠে আসেন রনিও। চট্টগ্রামের অফ স্পিনার নাঈম হাসানকেও ডেকে নেওয়া হয় এই অনুশীলনে।
নেট সেশনের এক পর্যায়ে রনির ফুটওয়ার্ক নিয়ে ঠিক সন্তুষ্ট মনে হচ্ছিল না সহকারী কোচ নিক পোথাসকে। মারকুটে ওপেনারকে কাছে ডেকে সামনের পা ঠিক পজিশনে রেখে শট খেলার কৌশল দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এমনটা করতে পারলে রশিদ হোক বা মুজিব, খেলা সহজ হবে।’
অনুশীলনে প্রায় সব ধরনের চেষ্টা করলেও মাঠে একদমই সহজ হচ্ছে না বাংলাদেশের কাজ। স্বাগতিকদের কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছেন রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবিরা। তিন স্পিনারের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছেন ফজলহক ফারুকি। দুই ম্যাচেই ৩টি করে উইকেট বাঁহাতি পেসারের।
স্পিনাররাও সম্মিলিতভাবে করছেন দারুণ বোলিং। বৃষ্টিময় প্রথম ওয়ানডেতে ২৪ ওভারে স্রেফ ৬৯ রানে ৫ উইকেট নেন তারা। দ্বিতীয়টিতে ২৫ ওভারে ৬ উইকেটের জন্য তাদের খরচ ৯৭ রান। দুই ম্যাচের কোনোটিতেই স্পিনারদের বিপক্ষে ওভারপ্রতি ৪ রানও নিতে পারেননি বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে আফগান বোলারদের কাজ সহজ করে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বাজে শট খেলার প্রবণতা। সাকিব আল হাসান ছাড়া বাকি সবাই উইকেট দিয়ে আসেন আলগা শট খেলে। দ্বিতীয়টিতে ৩৩২ রানের চ্যালেঞ্জে নেমে রশিদ-মুজিবদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে কোনো জবাব দিতে পারেননি লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা।
মুজিবের জোরের ওপর করা লেংথ ডেলিভারি সোজা আসবে ভেবে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছিলেন শান্ত। কিন্তু হালকা টার্নে বেরিয়ে গিয়ে সেটি ভেঙে দেয় অফ স্টাম্প। বোল্ড হয়ে অবিশ্বাস্যের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে শান্তর চোখে-মুখে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানের এই অবস্থায়ই যেন পরিষ্কার দলের বাকিদের অবস্থা।
রশিদের দারুণ গুগলি একদম বুঝতেই পারেননি প্রথম ম্যাচে পঞ্চাশ করা তাওহিদ হৃদয়। নবির বলে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ সাকিব। আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজরাও ঠিকঠাক সামলাতে পারেননি মুজিব-নবিদের স্পিন। দুই ম্যাচেই তাদের অর্ধেকের বেশি বলে কোনো রান নিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
শুধু এই সিরিজই নয়, আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সার্বিক পরিসংখ্যানও তেমন সুখকর নয়। তিন স্পিনারের কারো বিপক্ষেই ওভারপ্রতি চার রানও নিতে পারেনি বাংলাদেশ। রশিদ-মুজিবদের স্পিনের সঙ্গে পেস আক্রমণে নতুন হুমকি হয়ে আসা ফারুকি এরই মধ্যে পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন ১২ উইকেট।
এই চার জনের সঙ্গে থাকতে পারতেন আরেক পেসার নাভিন উল হকও। বাংলাদেশের কাজটা তখন হয়তো হতো আরও চ্যালেঞ্জিং। সামনের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ প্রায় সব দলেই খেলতে হবে পাঁচ জন কঠিন বোলারের বিপক্ষে। সেক্ষেত্রে আরও কঠিন পরীক্ষায়ই পড়তে হবে ব্যাটসম্যানদের।
আগামী অক্টোবরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেরা প্রস্তুতির লক্ষ্যে এই সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিংয়ের এই অবস্থা যেন সতর্কবার্তা হয়েই এসেছে দলের জন্য। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপেও নামবে দল। এই দুই টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য চ্যালেঞ্জিং বোলিং আক্রমণের সামনেও ব্যাটসম্যানদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের অবশ্য দাবি, আফগান বোলারদের এই চ্যালেঞ্জ উৎরানোর পথটা জানা আছে তাদের।
“আফগানিস্তানের বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো করতে হলে দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে। এক-দুইজন কখনও একটা দলকে জেতাতে পারে না। দশ-বিশ ম্যাচ পর হয়তো অলৌকিকভাবে একটা ম্যাচ জেতাতে পারে। কিন্তু সব মিলিয়ে দলগতভাবে খেলতে হবে। ব্যাটসম্যান যারা আছে, দায়িত্ব নিতে হবে। বড় স্কোর করতে হবে। আমরা ওই জিনিসটা নিয়েই চেষ্টা করছি যে, কীভাবে ভালো খেলব।”
“তাদের বোলারদের বিপক্ষে কোনো ভয় নেই। ক্রিকেট খেলায় কেউ কখনও ভয় পায় না। আমরা সবাই অনেক অভিজ্ঞ। ভয়ের কিছু নেই। আমরা রানের জন্য খেলছি। হয়তো ছোট ছোট ভুলগুলোতে আউট হয়ে যাচ্ছি। টানা উইকেট পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে। বড় জুটি দাঁড়াচ্ছে না। এটা নিয়ে সামনে আমরা পরিকল্পনা করব, কাজ করার চেষ্টা করব।”
হোয়াইটওয়াশের চোখরাঙানির সামনে এখন চেষ্টার প্রতিফলন মাঠে পড়াটাই জরুরি।