আফগানিস্তানের কাছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হার। শেষ ওয়ানডেটি ছিল কেবল নিয়মরক্ষার, হোয়াইটওয়াশ লজ্জা এড়ানোর। এমন এক ম্যাচে অবশ্য দাপুটে খেলেই জিতেছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানদের ৭ উইকেট আর ১৫৯ বল হাতে রেখে হারিয়েছে টাইগাররা। আফগানিস্তান সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
বোলাররাই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। ব্যাটারদের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১২৭ রানের। যদিও এবারও ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ২৮ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে যান নাইম শেখ আর নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনই আফগান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে বোল্ড।
৮ বলে ০ করেন নাইম শেখ। ফারুকির অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হন বাঁহাতি এই ওপেনার। ২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তও ভুল লাইনে খেলে বোল্ড। ফারুকির বলটি তিনি যেভাবে মিস করলেন, দেখে মনে হলো যেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার। ১৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে শান্ত করেন ১১ রান।
তবে এরপর অধিনায়ক লিটন দাস ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান মিলে এরপর গড়েছেন বল সমান ৬১ রানের জুটি। এই জুটিতে সহজ জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।
সাকিব অবশ্য হাফসেঞ্চুরি মিস করেছেন। মোহাম্মদ নবিকে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৩৯ বলে তার ৩৯ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি বাউন্ডারি মার।
তবে লিটন ভুল করেননি। মুজিব উর রহমানকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৬০ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় লিটন অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে। তাওহিদ হৃদয় ১৯ বলে করেন হার না মানা ২১।
এর আগে শরিফুল-তাসকিনদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১২৬ রানেই অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান।
নিয়মরক্ষার ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। শুরু থেকেই তাদের চেপে ধরেন বাংলাদেশি বোলারররা। দ্বিতীয় ম্যাচে একটি উইকেটের জন্য ৩১ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে স্বাগতিকদের। এবাদত, মোস্তাফিজ কিংবা হাসান মাহমুদরা ব্রেক থ্রুই এনে দিতে পারেননি।
শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। এক ওভারেই তিনি তুলে নিয়েছেন আফগান টপ অর্ডারের দুই উইকেট।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশ দলকে ব্রেক থ্রু উপহার দেন তিনি। শরিফুলের লেন্থ বলটি মাঝ উইকেটে পিচ করে হালকা আউটসুইং করে অফস্ট্যাম্প ঘেঁষে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। ব্যাট পেতে দিয়েছিলেন ইব্রাহিম জাদরান (১)। ব্যাটের কানায় লেগে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে জমা পড়ে বলটি।
দলীয় ৩ রানের মাথায় পড়ে আফগানিস্তানের প্রথম উইকেট। তবে, শরিফুল সেখানেই থেমে থাকেননি। একই ওভারে জোড়া আঘাত হেনেছেন তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে ওয়ানডাউনে নামা রহমত শাহকে (০) সাজঘরে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এই পেসার।
এবার তার করা লেন্থ বলটি ছিল লেগ স্ট্যাম্পের ওপর। রহমত শাহ ব্যাটটা নিয়ে গিয়েছিলেন শুধু। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে আবারও বল চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে। ৩ রানেই দুই উইকেট হারায় আফগানরা।
এরপর দলীয় ১৪ রানের মাথায় রহমানুল্লাহ গুরবাজকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ।
তাসকিনের শর্ট বলটি পুল করতে গিয়েছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ব্যাটের উপরের কানায় লেগে বল চলে যাচ্ছিলো মুশফিকের মাথার ওপর দিয়ে। হাত বাড়িয়ে ক্যাচটি লুফে নিলেন তিনি। ১৪ রানের মাথায় পড়ে তৃতীয় উইকেট। ২২ বলে ৬ রান করেন রহমানুল্লাহ।
বাংলাদেশের দুই পেসারের আগ্রাসন এরপরও চলতে থাকে। বিশেষ করে শরিফুলের। ইনিংসের ৯ম ওভারে দারুণ এক গুডলেন্থের বল, এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে দেয় মোহাম্মদ নবিকে। ৯ বল খেলে ১ রান করে আউট হন নবি।
দলীয় ৩২ রানের মাথায় সাকিব আল হাসান নেন আফগানদের পঞ্চম উইকেট। এবার এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন নাজিবুল্লাহ জাদরান।
একটা প্রান্ত ধরে রেখে খেলে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদি। তার সেই প্রতিরোধ ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। রিভার্স খেলতে গিয়ে লেগস্টাম্প হারান আফগান দলপতি। ৫৪ বলে তিনি করেন ২২। ৫৩ রান তুলতেই সাজঘরে ফেরেন ৬ আফগান ব্যাটার।
দলকে এই চরম বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। একটা প্রান্ত ধরে তিনি খেলেছেন ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। ৪৬তম ওভারে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ওমরজাই। ৭১ বলে করেন ৫৬ রান, যে ইনিংসে একটি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা হাঁকান এই ব্যাটার।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল শরিফুল ইসলাম। ৯ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে তিনি একাই শিকার করেন ৪টি উইকেট। এটিই ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং।
দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের পকেটে গেছে একটি করে উইকেট।