হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে না এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। সে কারণে চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে স্যালাইন সংকট মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম। এজন্য হাসপাতালগুলোকে নো অবজেকশন লেটার (এনওসি) দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (৬ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পুষ্টিসেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্যালাইন সংকট ও বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, সরকারি কোম্পানি ইডিসিএল আমাদের স্যালাইন সরবরাহ করার কথা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ইডিসিএল তা সম্পূর্ণভাবে করতে পারছে না। আমরা এ বিষয়ে সব হাসপাতালকে নির্দেশনা এবং টাকা বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছি। হাসপাতালেগুলো এখন লোকাল মার্কেট থেকে স্যালাইন কেনার ব্যবস্থা নেবে। বাজার কন্ট্রোল করার দায়িত্ব তো আর আমাদের না। আর আমরা এটা পারবোও না। বাজারকে কন্ট্রোল করার দায়িত্ব যাদের তারাই করবে।
ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের দাম বেড়েছে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বেশি দাম দিয়ে কারা কোথা থেকে কিনছে এটা আমার জানা নেই। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। আমরা সব জায়াগায় ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছি। আমাদের প্রতিটি হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণে কিট দেওয়া হয়েছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে কিট মজুত আছে। তবে লোকজনকে তো আমাদের কাছে আসতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠান শেষে ডেঙ্গু নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ডেঙ্গু এবার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এটা যে বাড়তে পারে আগে থেকেও আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। তাই পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগে থেকে লোকাল গভর্নমেন্টকে বলেছি। তারা অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে। লক্ষ্য করা গেছে, ডেঙ্গু অনেক জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। অত্যধিক মাত্রায় ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেখা যেত এটা মহানগরকেন্দ্রিক বেশি ছিল। কিন্তু এখন এটা গ্রামগঞ্জের মধ্যে ঢুকেছে, এটা হচ্ছে বড় সমস্যা। সেই কারণেই রোগীর সংখ্যাটা বেশি।
তিনি বলেন, ঢাকায় কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। বিশেষ করে মুগদা অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের অনেকবার বসা হয়েছে।
অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিলে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া হাসপাতালে আমরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তবে মুগদা হাসপাতালে রাসটা একটু বেশি, কারণ মুগদা এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপও বেশি। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী আসছেন, আবার অনেক রোগী সুস্থ হয়ে রিলিজ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে সমস্যা।
ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন কীভাবে সামাল দেবে, বেশ কিছু হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো ঘটে অধৈর্য কিছু লোকের কারণে। যেমন মুগদা হাসপাতালে আমাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে লোকজন চলে এসেছে। কিন্তু মানুষজনকে খালি হাসপাতালগুলোতে যেতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের বা স্বজনদের অন্য হাসপাতালে যেতে বললে ঝামেলা ঘটে। রোগীরা তখন বলে মুগদা হাসপাতাল তাদের বাড়ির পাশে, এখানেই তারা ভর্তি হতে চান। সবাই যদি পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা ও চিকিৎসা নেন তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।
হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দেড় হাজার বেড তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, যে হাসপাতালের সক্ষমতা এক হাজার জনকে চিকিৎসা দেওয়ার, সেটা তো আমি দুই হাজার করতে পারছি না।