দুই সিনিয়র তামিম ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেনি নিউজিল্যান্ড বোলারদের সামনে। ২৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪১.১ ওভারে অলআউট হলো ১৬৮ রানে। ফলে ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়লো টাইগাররা।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা দাঁড়াতেই পারেনি কিউইদের বোলারদের, বিশেষ করে ইশ সোধির সামনে। একাই ৩৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের কোনো স্পিনার আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালো। এর আগে ব্যাট হাতে ৩৯ বলে ৩৫ রান করেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ইশ সোধির অলরাউন্ড নৈপুণ্যের কাছেই হারতে হলো বাংলাদেশকে।
ওপেনার তামিম ইকবাল কিছুক্ষণ লড়াই করেছিলেন। তার সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জুটিটাও আশা দেখাচ্ছিলো বাংলাদেশকে; কিন্তু সেটা খুব বেশিক্ষণের জন্য না। ১ উইকেটে ৬০ রান থেকে ৫ উইকেটে ৯২। এই যে ব্যাটিংয়ে কোমর ভাঙলো, সেখান থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি টাইগাররা।
৫৮ বলে ৪৪ রান করেন তামিম। ৭৬ বলে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য এটুকু যথেষ্ট কি না, সেটা হয়তো নির্বাচকরাই ভালো বলতে পারবেন, তবে খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ, রিয়াদ যদি দলকে জেতাতে পারতেন কিংবা জেতানোর অবস্থা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তার থাকা না থাকা নিয়ে আলোচনা হতে পারতো।
দুই অংকের ঘর স্পর্শ করেছেন আর কেবল নাসুম আহমেদ (২১), মাহেদী হাসান (১৭) এবং তানজিদ হাসান তামিম (১৬)। বাকিরা ছিলেন আশা যাওয়ার মিছিলে। দুই অংকের ঘরও স্পর্শ করতে পারেননি।
জয়ের জন্য ২৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর প্রথম ওভারেই প্রায় আউট হয়ে গিয়েছিলেন লিটন দাস। ট্রেন্ট বোল্টের বল প্রথম মোকাবেলা করতে গিয়েই পরাস্ত হয়েছিলেন তিনি। হালকা আবেদন উঠেছিলো। সে আবেদনে কিছুটা সময় নিয়ে সাড়া দেন আম্পায়ার মরিস ইরাসমাস। লিটন রিভিউ নিলেন। হক আই ভিউতে দেখা গেলো, বল স্ট্যাম্প মিস করতো। উপর দিয়ে চলে যেতো উইকেটরক্ষকের হাতে। সুতরাং, নট আউট।
গোল্ডেন ডাক না মারলেও ব্যাট হাতে ভালো স্কোর গড়তে পারেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। ১৬ বল খেলে ৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। কাইল জেমিসনের বলে রাচিন রবিন্দ্রর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লিটন। বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৯ রান।
বিশ্বকাপের আগে নিজেকে প্রমাণ করার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। এশিয়া কাপে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। সুযোগ পেয়ে ঘরের মাঠেও পারলেন না। ১২ বলে ১৬ রান করে আউট হতে হলো তাকে।
বড় তামিম এবং ছোট তামিমের জুটিটা হলো ৪১ রানের। ১৯ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর দুই তামিমের ব্যাটে মনে হচ্ছিলো ভালোই এগুচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইশ সোধির বলে লকি ফার্গুসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তানজিদ হাসান তামিম।
সৌম্য সরকার বরাবরের মতোই ব্যর্থ। নিজের সামথ্যের বিন্দুমাত্রও ব্যবহার করতে পারলেন না। মাঠে নামলেন এবং মাত্র ২ বল খেলেই ইশ সোধির হাতে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটলো তাওহিদ হৃদয়ের আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। ৭ বল খেলে ৪ রান করলেন তিনি। এরপরই বোল্ড হয়ে গেলেন ইশ সোধির বলে। ৭০ রানের মাথায় পতন ঘটলো বাংলাদেশের ৪ উইকেটের।
তামিম-মাহমুদউল্লাহর জুটিটা হলো ২২ রানের। দীর্ঘদিন পর একটি হাফ সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক। কিন্তু সোধির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তামিম ইকবাল। ৪৪ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। পরের জুটিতে মাহদি হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ৪২ রান তোলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৯ বলে ১৭ রান করে আউট হন মাহদি হাসান।
নাসুম ৩০ বলে খেলেন ২১ রানের ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হনে ১৪৯ রানের মাথায়। এরপর একে একে হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ এবং খালিদ আহমেদরা আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
ইশ সোধির ৬ উইকেট ছাড়াও কাইল জেমিসন নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন লকি ফার্গুসন এবং কোল ম্যাকনচি।