ফিরে দেখা ঃ
(২৬ অক্টোবর ২০১৫ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সেই বহুল আলোচিত সংবাদ। যার ভিত্তিতেই শুরু হয় তদন্ত )
চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্রে বিনিময়ে বছরব্যাপী ছাত্রী ভর্তি, সরকারি-বেসরকারি ফান্ডের র্অ লুটপাট, অতিরিক্ত ফি আদায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য সহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠেছে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বরাবর প্রেরিত কয়েকজন অভিভাবকের স্বাক্ষর করা এক লিখিত অভিযোগ থেকে এসব বিষয়ে অবহিত হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীরা ।
ওই অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান শেষে তথ্য মিলেছে, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ েেক ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শিফটে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ জন ছাত্রী বর্তমানে অধ্যয়নরত। বর্তমান প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা ২০১২ সালের শেষ দিকে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। যোগদানের পর পরই তার শ্যানদৃষ্টি পড়ে ছাত্রীদের টিফিন ফান্ডের দিকে। তার পূর্বে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান শিক্ষক আলফত আলী দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় টিফিন ফান্ডে ৭ লাখ টাকা রেখে যান। এ ছাড়া অডিটের আওতা বহিঃর্ভূত বিভিন্ন বেসরকারি ফান্ডে আরো কয়েক লক্ষ টাকা ছিল। উত্তম কুমার বিভিন্ন পকেট কমিটির মাধ্যমে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে ওই টাকার প্রায় পুরোটাই আত্মসাত করেন। সোনালী ব্যাংক, চাঁদপুর শাখা েেক হিসাব বিবরণী নিলেই এর সত্যতা মিলবে। লুটপাটের পরিমাণ ভারি করতে মেয়েদের ৫০ টাকার টিফিন ফি বাড়িয়ে ৯০ টাকা করেন তিনি। এছাড়া সরকারি বরাদ্দের অংশ েেক বিভিন্ন খাতে নাম মাত্র ব্যয় করে সিংহভাগ র্অ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা করে কোমলমতি শিশুরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪র্থ শ্রেণিতে ১২২ জন ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১২২ জন ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভর্তি পরীক্ষার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আরো ১৯ জন ছাত্রী ভর্তির অনুমতি দেন। প্রধান শিক্ষক ওই অনুমতিকে পুঁজি করে বিভিন্ন তারিখে বিরাট অংকের বিনিময়ে আরো ৫৭ জন অর্থাৎ মোট ৭৬ জন ছাত্রী ভর্তি করেন। এছাড়াও বিধি বহির্ভূতভাবে গত দু’মাসে ৫ম শ্রেণিতে ০৭জন ও ৯ম শ্রেণিতে ০৬ জন ছাত্রীকে বিশাল অংকের বিনিময়ে ভর্তি করেন। অভিযোগ রয়েছে, ৪র্থ শ্রেণিতে সঙ্গিতা ভৌমিক-২৫,০০০/- টাকা, ৬ষ্ঠ শ্রেণি প্রভাতিতে স্নেহা পাল-৩০,০০০/- টাকা, ৬ষ্ঠ শ্রেণি. প্রভাতি ক শাখায় স্বস্তিকা সরকারকে ১৭,০০০/- টাকার বিনিময়ে ভর্তি করান। মন্ত্রী মায়া চৌধুরীর সুপারিশের পরও সাদিয়া আক্তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২৫,০০০/= টাকার বিনিময়ে ভর্তির সুযোগ পায়। অর্রে বিনিময়ে ভর্তি হওয়া ৫৭ জন ছাত্রীর মধ্যে র্৪ শ্রেণিতে -৩৯ জন (দিবা২৩ জন, প্রভাতি -১৬ জন ) এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে -৩৭ জন, (দিবা-ক ০৮ জন, খ ০৭ জন, প্রভাতি ক ১২জন, প্রভাতি খ ১০জন)।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ২৪ জন ছাত্রীর নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
আরো পড়ুন: দুর্নীতির দায়ে মাতৃপীঠ সরকারি উবি’র সাবেক প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা বরখাস্ত হচ্ছেন
৬ষ্ঠ (ক) প্রভাতি ঃ-তাহমিনা ইসলাম, জান্নাতুল মাওয়া, তানজিলা মজুমদার, তাসকিয়া আলী, প্রাপ্তিকা সাহা, শ্রেয়া রায়, আনিতা বড়ুয়া, স্বস্তিকা সরকার।
৬ষ্ঠ (খ) প্রভাতি ঃ-ফাতেয়াতুল বর্ণ, ফারিয়া আবেদিন, উম্মে বাউমি হোসেন, মাহিমা আক্তার, আয়শা এমদাদ, সাদিয়া আক্তার, তুন্ন সরোয়ার।
৬ষ্ঠ (খ) দিবাঃ- উম্মে আমিন, রাফিয়া, মেহেজাবিন, হেলাখ, সুমাইয়া, ফারজানা, সায়মা, তানজিলা এবং সাদিয়া আক্তার।
৪র্থ শ্রেণির প্রভাতী ও দিবা শাখার হাজিরা খাতা ও ৬ষ্ঠ ক দিবা শাখার হাজিরা খাতায় প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সবসময় ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা হয় এছাড়াও আয়েশা আক্তার নামের এক চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রোল নম্বর ৬২ কে ১০ টি ফ্যানের বিনিময় ভর্তি করা হয় যা সরকারি বিধির পরিপন্থি। কারণ আসবাবপত্রের জন্য সরকার প্রতিবছর বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে। অভিভাবকরা দাবী করেছেন, ভর্তি কমিটির সুপারিশ ব্যতিত যত ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে তাদের ভর্তি বাতিল করা হোক। কারণ ভর্তিকৃত অধিকাংশ ছাত্রীই কম মেধাবী এবং শহরের বিভিন্ন স্কুল খালি করে এরা এসেছে। তাছাড়া সরকারের শিক্ষামন্ত্রনালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ভর্তি কমিটির সুপারিশ ব্যতিত একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি করানোর এখতিয়ার রাখেন না।
উত্তম কুমার সাহার মেয়ে স্নেহা সাহা বিগত পি. এস. সি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করায় আইনগত তিনি ওই পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব াকতে না। সে মতে পরীক্ষা কমিটিতে তাকে প্রমে রাখা হয়নি। তিনি তদবির করে কেন্দ্র সচিব হন এবং মেয়েকে পরীক্ষায় উত্তর বলে দেওয়ার জন্য প্রতিদিনই ২/৩ জন শিক্ষক রেখেছেন। তাছাড়া ১ম দিন ইংরেজি ১ ঘন্টা আগে তিনি প্রশ্নের পাকেট খুলে ১টি প্রশ্ন বাসায় দিয়ে আসেন। তার এই অনিয়মের বিষয়টি টের পেয়ে হল সুপার পরবর্তী পরীক্ষা গুলোতে ৩০ মিনিট পূর্বে প্রশ্ন কেন্দ্রে আনেন যাতে তিনি কোনো সমস্যায় না পড়েন।
উত্তম কুমার সাহা ৫ম, ৮ম ও ১০ম শ্রেণির ছাত্রীদের কোচিং করতে বাধ্য করেন। কোচিং এর অর্ধেক টাকা নিজে সরিয়ে নিয়ে বাকী অর্ধেক টাকা শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। এমনকি নিজে কোচিং ক্লাস না করে সপ্তাহে ১৪টি ক্লাস তার নামে বরাদ্দ রেখে কোনো ক্লাস না করে ক্লাস ফাঁকা রেখে তা ভোগ করেন।
মোট কথা বিদ্যালয়ের সকল খাতে শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করে তিনি সিংহভাগ অর্থ অনৈতিকভাবে নিয়ে যান। শিক্ষকরা বদলির ভয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু বলছেনা। কতিপয় দুর্ণীতিবাজ শিক্ষককে হাতে বেধে তিনি এই অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ৫ জন শিক্ষককে ইতোমধ্যে অন্যত্র বদলী করে নিজের পছন্দসই লোক বদলি করে এনেছেন। বিদ্যালয়ে প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষা, ছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় তিনি হলে গিয়ে তার পছন্দমত পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগও তার বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। অর্থ দিলে তিনি আগেই পরীক্ষার প্রশ্ন বলে দেন এবং বিশাল টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মাতৃপীঠ সকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা জানান, এতো ছাত্রী ভর্তি করা হলে তো আরো একটি সেকশন খোলার প্রয়োজন হতো। ভর্তি কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে ভর্তি কার হয়নি। টিফিন ফান্ডে বর্তমানে ১৩ লাখ টাকা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
Discussion about this post